আদালতে আটকে আছে ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গের নিলাম

ছবি : সংগৃহীত

প্রযুক্তি ডেস্ক

০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম

বিটিআরসির কাছ থেকে বিনামূল্যে ২০০৭ সালে যে স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) নিয়েছিল অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ক সেই তরঙ্গ ছেড়ে দিতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআরসি ওই আইএসপিকে বিকল্প পাঁচ গিগাহার্জ ব্যান্ড প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। কিন্তু তারা তা নেয়নি। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বিটিআরসি ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর আইএসপিটির ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ওই স্পেকট্রাম বরাদ্দ বাতিলও করে দেয়।


দেশে চালু হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট

গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চ গতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছানো, ভবিষ্যতে ফাইভ-জির প্রয়োজনীয়তা, সরকারের বিপুল রাজস্বের মতো প্রেক্ষাপটে ৭০০ ব্যান্ডের ওই স্পেকট্রাম এখন রাষ্ট্রীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ। বিটিআরসি তাদের স্পেকট্রাম ছেড়ে দিতে বললে অলওয়েজ নেটওয়ার্ক তা না শুনে উল্টো স্পেকট্রাম বরাদ্দ বাতিলের বিরুদ্ধে রিট করে। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি বিটিআরসি ওই মামলায় হেরে যায়। এরপর আপিল করে সরকারি সংস্থাটি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে শুনানি পিছিয়ে যায়। আওয়ামী আমলে ওই শুনানির জন্য তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিটিআরসি জানিয়েছে, তারা দ্রুতই শুনানির জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে এই তরঙ্গ অব্যবহৃত থাকায় সরকারের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলাপ করেছি। আশা করছি, খুব দ্রুতই শুনানি হবে।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২১ মার্চে অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ লিমিটেডকে ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ৭০৪-৭১০ ও ৭৩৪-৭৪০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় এই ব্যান্ডে আইএমটির (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন) জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের (আইটিইউ) কোনো পরিকল্পনা দেওয়া ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ককে ওই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালের নভেম্বরে বিশ্ব রেডিও কমিউনিকেশন কনফারেন্সে এই স্পেকট্রাম আইএমটির জন্য নির্ধারণ করা হয় এবং পরে এশিয়া-প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি (এপিটি) ব্যান্ডটির পরিকল্পনা তৈরি করে। অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ককে দেওয়া ৭০৪-৭১০ ও ৭৩৪-৭৪০ স্পেকট্রাম এমন অবস্থানে রয়েছে, যা আইটিইউয়ের পরিকল্পনার ৭০৩-৭৪৮ ও ৭৫৮-৮০৩ এর ৭০৩-৭৪৮ এর মাঝখানে পড়েছে।

এখন মোবাইল ফোন অপারেটরদের দাবি অনুযায়ী, পুরো ৪৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিয়ে এই ব্যান্ডে নিলাম করতে গেলে এই আইএসপির কারণে আটকা ২০ মেগাহার্টজও লাগবে।

সূত্র আরো জানায়, বিটিআরসি ২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাঁচ গিগাহার্জ ব্যান্ডে তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশকে নির্দেশ দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ওই আইএসপির অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া তরঙ্গ বরাদ্দ বাতিল করা হয় এবং পাঁচ গিগাহার্জ ব্যান্ড থেকে প্রয়োজনীয় তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য পুনরায় নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আইএসপিটি হাইকোর্টে রিট করে।

সূত্র জানায়, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট তরঙ্গ পরিবর্তনের পত্রটিকে বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত স্থিতাবস্থা বজায়ের আদেশ দেয় এবং একই সঙ্গে রেগুলার সিভিল পিটিশনের নির্দেশনা দেয়। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন কর্তৃক ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর লিভ টু আপিল করা হয়েছে। যা এখনো বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

সূত্র জানায়, ১০ বছর ধরে অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ লিমিটেডের কোনো রেডিও নেটওয়ার্ক নেই, তারা এই তরঙ্গ ব্যবহার করছে না এবং তাদের কোনো গ্রাহক নেই। তা ছাড়া আইএসপি লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী এই তরঙ্গ ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। লাইসেন্সের শর্ত মেনে সার্ভিস প্রদান করার জন্য বিশ্ববাজারে কোনো যন্ত্রপাতিও নেই। অন্যান্য দেশে এই তরঙ্গ আইএসপি লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহারের নজির দেখা যায় না। বিশ্বব্যাপী এই তরঙ্গ ফোর-জি ও ফাইভ-জি সেলুলার মোবাইল নেটওয়ার্কের কভারেজ ব্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য।