জুনে আসছে আইএমএফের ঋণ

১৪ মে ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
আইএমএফের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য বড় একটি স্বস্তির খবর মিলেছে। ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের আওতায় চলতি অর্থবছরের জুন মাসে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ অবশিষ্ট কিস্তি ছাড়ে সম্মতি দিয়েছে।

রিজার্ভ চুরির ৮০ শতাংশ ফেরত আনা হয়েছে : গভর্নর
ঋণের শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণে নমনীয় হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থার করিডর ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশে নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তাতে ডলারের বিনিময়হার বাজারের কাছাকাছি যাবে। আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ঋণছাড় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি সামাল দিতে বড় সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আইএমএফ সব সময় ঋণের আগে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত নির্ধারণ করে। তিন মাস পরপর তারা অর্থনৈতিক সূচক পর্যালোচনা করে সন্তোষজনক মনে করলে কিস্তি ছাড় করে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা ৪৭০ মিলিয়ন ডলারের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ে সম্মত হয়েছে। তবে এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত নয়।’
তবে আইএমএফের সবচেয়ে কঠিন শর্ত ছিল ডলারের বিনিময়হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো বাজার নির্ধারিত পুরোপুরি ভাসমান হার চালু করতে রাজি না হলেও ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় নমনীয় হচ্ছে। বর্তমানে এ ব্যবস্থায় মধ্যবর্তী বিনিময়হার ১১৯ টাকা।
এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ করিডর যোগ করে ডলার কেনাবেচা করতে পারছে ব্যাংকগুলো। নতুন করে এই করিডর ৪ শতাংশে উন্নীত করার চিন্তা রয়েছে, যাতে বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায়।
নিট রিজার্ভ (এনআর) নিয়েও আছে চাপ। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, জুনের মধ্যে এনআর থাকতে হবে অন্তত ১৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রয়েছে প্রায় ১৬ বিলিয়ন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, জুনের মধ্যে এই শর্ত পূরণ সম্ভব হবে।
এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়ে গেছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। জ্বালানি ও কৃষি খাতে ভর্তুকির চাপে সরকারকে সংকোচনমূলক বাজেটের দিকে যেতে হচ্ছে। আগামী বাজেটের আকার প্রস্তাব করা হয়েছে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের চেয়ে ছোট। কেবল জ্বালানি খাতেই প্রয়োজন হবে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি।
রাজস্ব আদায়, ব্যয় সংকোচন এবং রিজার্ভ বাড়ানোর এই সমন্বিত উদ্যোগের মধ্যেই আইএমএফের ঋণ ছাড় হলে তা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।