শেয়ারবাজারে হতাশা ও আতঙ্ক

প্রতীকী ছবি
২৮ মে ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
দেশের শেয়ারবাজারে টানা পতনের মধ্যে আজ বুধবার (২৮ মে) পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক আজ কমেছে প্রায় ৬৩ পয়েন্ট। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে।
লুটপাটের খেসারত দিচ্ছেন ৫ ব্যাংকের গ্রাহকরা
এর অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, যেখানে তালিকাভুক্ত ১৮টি ব্যাংককে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য কোনো ধরনের ডিভিডেন্ড (ক্যাশ বা স্টক) না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল এবং প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে, ফলে তারা শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড প্রদানে সক্ষম নয়।
এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে পড়েছে। ব্যাংক খাত শেয়ারবাজারে বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে। এই খাতের শেয়ারগুলোর দরপতনের কারণে বাজারের সামগ্রিক সূচকও নিচে নেমেছে। এর ফলে শুধু ব্যাংক খাত নয়, অন্যান্য খাতেও বিক্রির চাপ তৈরি হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে শেয়ারবাজারে টানা ছয় কর্মদিবস ধরে সূচক কমেছে। গত বৃহস্পতিবার সূচক কমেছে ১৬ পয়েন্ট, শনিবার ৩৯ পয়েন্ট, রোববার ১০ পয়েন্ট, সোমবার ১৭ পয়েন্ট, মঙ্গলবার ৪১ পয়েন্ট এবং আজ বুধবার আরও ৬৩ পয়েন্ট কমেছে। সবমিলিয়ে ছয় দিনে মোট কমেছে ১৮৯ পয়েন্ট।
বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি এক বড় ধাক্কা। যারা ব্যাংক খাতের শেয়ারে ডিভিডেন্ড প্রত্যাশায় বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ডিভিডেন্ড না পেলে বিনিয়োগের অনুপ্রেরণা কমে যায় এবং আস্থাও দুর্বল হয়। এর পাশাপাশি শেয়ারবাজারে নগদ প্রবাহও কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হয়তো ব্যাংকিং খাতের আর্থিক শৃঙ্খলা আনতে সহায়ক হবে। কিন্তু শেয়ারবাজারের জন্য এটি তাৎক্ষণিকভাবে নেতিবাচক। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয় থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে হয়তো রোধ করা যেত।
এখন বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন তাৎক্ষণিক প্রণোদনা, স্বচ্ছ নীতিমালা, সময়োপযোগী সমন্বয় এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক পদক্ষেপ। প্রয়োজনে বাজারে ভালো পারফর্ম করা কোম্পানিগুলোর তথ্য প্রচার বাড়ানো, ব্যাংক খাতের সংস্কার পরিকল্পনা প্রকাশ করা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরেই নানাবিধ চাপের মধ্যে রয়েছে। এখন এ ধরনের কঠোর নির্দেশনা বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই দ্রুত নীতিগত সমন্বয় ও বাস্তবসম্মত করণীয় গ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে শেয়ারবাজারের জন্য টেকসই সমাধান।


