হাসিনাকে ১০০ কোটি ঘুষ, ট্রান্সকম সিইও সিমিনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের মৃত্যু হলে এক মাসের মাথায় গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান, বড় মেয়ে সিমিন হোসেন পান সিইওর দায়িত্ব। এর সাড়ে তিন বছরের মাথায় লতিফুরের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক মামলার পথে হাঁটায় এ পরিবারের কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব সেসময় প্রকাশ্যে আসে।

ছবি : সংগৃহীত
০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘১০০ কোটি টাকা ঘুষ’ দেওয়ার অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সংস্থার একজন উপ-পরিচালককে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধানও শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৯ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও এর বিরুদ্ধে ‘হত্যা, শেয়ার জালিয়াতি ও প্রতারণার’ একাধিক মামলা ‘ধামাচাপা দিতে’ গত সপ্তাহে দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘১০০ কোটি টাকা ঘুষ’ দেওয়ার অভিযোগের কথা বলেছে দুদক।
সংস্থার একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগটি অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক গত ৫ নভেম্বর সংস্থার উপ-পরিচালক এ কে এম মাহবুবুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়।
এ বিষয়ে মাহবুবুর বলেন, অভিযোগ অনুসন্ধানের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে।
এ অনুসন্ধান কাজের তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্ত-২ এর পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে কমিশনের সভায় এ অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে দুদকের এক চিঠিতে বলা হয়।
অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগের চিঠিতে অভিযোগটি অনুসন্ধান করে যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে কোনো ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা বা সম্পদ বা সম্পত্তি জব্দ করার প্রয়োজন হলে তা লিখিতভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত-২ শাখাকে জানাতে বলা হয়।
দুদকের অভিযোগগুলোর বিষয়ে সিমিন রহমানের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
প্লট দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে প্লট, টোল ও অনুদান ‘দুর্নীতি ও অর্থপাচার’ এর মত অনিয়মের অভিযোগসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা, অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে দুদক। এই পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে অন্তত ১৫টি মামলা করেছে সংস্থাটি, যার তিনটিতে রায় হল বৃহস্পতিবার।
এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে গেল ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অপরদিকে দেশের বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে ভাইকে হত্যার অভিযোগ আনেন তার ছোট বোন শাযরেহ হক।
ঢাকার গুলশান থানায় ২০২৪ সালের ২১ মার্চ এ মামলায় বড় বোন সিমিন রহমান পাশাপাশি তার ছেলে ও ট্রান্সকম গ্রুপের হেড অব ট্রান্সফরেশন যারাইফ আয়াত হোসেনসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়।
১০ মাস আগে বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় মামলাটি করেছিলেন শাযরেহ হক। তখন মামলাটি তদন্ত শুরু করার কথা জানিয়েছিলেন ওই সময়ে গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।
২০২৩ সালের ১৬ জুন ঢাকার গুলশানের বাসায় নিজের শোয়ার ঘরে মৃত অবস্থায় আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে পাওয়া যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে জানান।
হাইকোর্ট এ মামলায় ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ সিমিন রহমানসহ তিনজনকে দেশে ফেরার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল।
ট্রান্সকমের পরিচালক শাযরেহ হক ওই মামলাসহ সেসময় পরিবারের সদস্যসহ ট্রান্সকম গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছিলেন।
আগের তিন মামলায় অর্থ আত্মসাৎ, সম্পত্তি দখল ও অবৈধভাবে শেয়ার হস্তান্তরের অভিযোগ এনেছিলেন শাযরেহ; যাতে আসামি করা হয়েছিল তার মা, বোন, ভাগ্নেসহ আটজনকে। ওই মামলায় ট্রান্সকমের পাঁচজন কর্মকর্তা গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। সে সময় এ তিন মামলার সূত্র ধরে পিবিআই ট্রান্সকম গ্রুপের গুলশানের হেড অফিস থেকে বেশ কিছু নথি জব্দ করে।
করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের ১ জুলাই ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের মৃত্যু হলে এক মাসের মাথায় গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান, বড় মেয়ে সিমিন হোসেন পান সিইওর দায়িত্ব।
এর সাড়ে তিন বছরের মাথায় লতিফুরের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক মামলার পথে হাঁটায় এ পরিবারের কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব সেসময় প্রকাশ্যে আসে।
লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান এখন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার বড় মেয়ে সিমিন রহমান গ্রুপের সিইও। ছোট মেয়ে শাযরেহ হকও ট্রান্সকম গ্রুপের একজন পরিচালক।
নতুন করে ‘ঘুষ’ দেওয়ার অভিযোগের বিষয় নিয়ে দুদুকের অনুসন্ধানের বিষয়ে ট্রান্সকম গ্রুপের মিডিয়া, লিগ্যাল, জনসংযোগ বিভাগ বা কোম্পানি সচিবের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।


