তাজমহল হিন্দু প্রাসাদ, বলিউড সিনেমায় নয়া উস্কানি

ছবি : সংগৃহীত
০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম
ভারতের ঐতিহাসিক প্রেমের প্রতীক তাজমহলকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে বলিউডের একটি চলচ্চিত্রের কারণে। ‘দ্য তাজ স্টোরি’ নামের এই সিনেমা মুক্তির পর থেকে সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চলচ্চিত্রে একটি ভ্রমণ গাইড চরিত্র- বিষ্ণু দাস- তাজমহলের ঐতিহাসিক প্রকৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
৫ দিনের রিমান্ডে তৌহিদ আফ্রিদি
তিনি বলেন, ১৭ শতকের তাজমহল কোনো মুসলিম সমাধি নয়, বরং এটি একটি হিন্দু প্রাসাদ, এবং পরে মুসলিম শাসকেরা এটিকে নিজেদের ব্যবহার উপযোগী করে সাজিয়েছে। এই তত্ত্ব ইতিমধ্যেই ইতিহাসবিদদের মধ্যে সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
সিনেমার পরিচালক তুষার গোয়েল বলেন, চলচ্চিত্রটি কোনো ধর্ম বা রাজনৈতিক দলের প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়নি। এটি কেবল ইতিহাসের বিভিন্ন তত্ত্ব এবং জনস্বার্থভিত্তিক প্রশ্নের আলোচনার চেষ্টা। তবে সমালোচকরা বলছেন, সিনেমায় মুসলিম চরিত্রগুলো প্রায়শই নায়কের বিরোধী হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে।
চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা পরেশ রাওয়াল, যিনি একসময় বিজেপির আইনপ্রণেতা ছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, চলচ্চিত্রে কোনো ধর্মকে নিশানা করা হয়নি এবং কেবল ঐতিহাসিক তথ্য ও ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে।
সমালোচকরা মনে করছেন, চলচ্চিত্রটি ভারতের সরকারী ইতিহাস পুনর্লিখনের সম্প্রতি চলমান ধারার অংশ।
২০১৪ সালের পর থেকে কিছু মিডিয়া ও শিক্ষা সংস্থায় মোগল আমলকে কম গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন এবং হিন্দু ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে তাজমহল, উগ্রপন্থী হিন্দু-ধর্মীয় সংঘর্ষ এবং প্রাচীন স্থাপনার পুনর্নামকরণ বিষয়গুলো প্রভাবশালী হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বলিউডের সাম্প্রতিক দশকের সিনেমাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও সামাজিক উত্তেজনার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ (২০২২) ও ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ (২০২৩) চলচ্চিত্রের নাম উল্লেখ করা হয়। এই সিনেমাগুলোকে মুসলিম ইতিহাস ও পরিচয়কে নিন্দিত করার প্রয়াস হিসেবে দেখা হয়েছে। তবে তাজমহলের শ্বেত মার্বেল স্থাপন, যমুনা নদীর তীরে তার অপরূপ সৌন্দর্য ও চিরন্তন আবেদন এখনো অক্ষত। ইতিহাসবিদরা মনে করান, সিনেমা বিতর্কিত হলেও স্থাপত্যের ঐতিহ্য ও নান্দনিকতা অপরিবর্তিত।
বিশেষজ্ঞ লিডল বলেন, “আমরা এমন চলচ্চিত্র দেখছি যা সচেতনভাবে ঐতিহাসিক মুসলিম চরিত্রগুলোকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যযুক্ত এবং বিপজ্জনক প্রবণতা।”
উল্লেখ্য, তাজমহল প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ পর্যটককে আকর্ষণ করে এবং এটি ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্যের স্বীকৃত স্থাপনা। এখানে যুগলরা চিরন্তন প্রেমের প্রতীক হিসেবে ঘুরে ঘুরে অনুপ্রেরণা পান, যা ভারতের বহুধর্মীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত।


