আফগানিস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পে সাহায্য করছে ভারত

ছবি : সংগৃহীত
০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:০৯ পিএম
আফগানিস্তানের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রকল্পের ব্যাপারে তাদেরকে সহযোগিতা করবে ভারত। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মধ্যে এক বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত।

হাসিনার বক্তব্য জটিলতা তৈরি করেছে : শশী থারুর
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও আফগানিস্তান তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে চলেছে।
বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী বলেন, নয়াদিল্লি আফগান জনগণের জরুরি উন্নয়নমূলক প্রয়োজনে সাড়া দিতে প্রস্তুত।
বৈঠকের পর এক ঘোষণায় তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেন, তারা আফগান অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। আফগানিস্তানে অনবরত মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য মুত্তাকি নয়াদিল্লির প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদ জানান।
এক বিবৃতিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য বর্তমান প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, চলমান মানবিক সহযোগিতা কর্মসূচি ছাড়াও নিকট ভবিষ্যতে ভারত উন্নয়ন প্রকল্পে নিজেকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তালেবান সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে নয়াদিল্লি আফগানিস্তানে শরণার্থীদের পুনর্বাসন এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আরও সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছে।
এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উভয় দেশই বিভিন্ন স্তরে তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে সম্মত হয়।
আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তার সরকার ‘ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি কেন্দ্রিক পররাষ্ট্র নীতি’ অনুসরণ করছে। তিনি এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের তাৎপর্যকে স্বীকার করে দেশটির সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ওপর তার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
আফগানিস্তান বহু বছর ধরে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় পক্ষকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আফগানিস্তানের দিক থেকে কারও জন্য কোন বিপদ নেই।’
এসময় কুটনৈতিক সম্পর্ক জোরালো করার এবং ব্যবসায়ী, রোগী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার সুবিধা প্রদানের আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সে দেশে মাদক দ্রব্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের লড়াইয়ের প্রশংসা করেন।
মিশ্রী বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারিত করতে চায় এবং প্রতিবেশী ইরানের চাবাহার বন্দর দিয়ে বাণিজ্য বাড়াতে চায়।
প্রসঙ্গত, কোন দেশই আফগানিস্তানের বৈধ শাসক হিসেবে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি তবে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান ও কাতারসহ প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক দেশগুলো আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস বহাল রেখেছে। ভারত সম্প্রতি কাবুলে আবার তাদের কূটনৈতিক মিশন খুলেছে যেখানে, অধস্তন কূটনীতিকরা দায়িত্ব পালন করছেন।
কাবুলের সঙ্গে সম্প্রতি ইসলামাবাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। পাকিস্তান এই অভিযোগ করছে যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি’র পলাতক জঙ্গিদের পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে মদদ দিচ্ছে তালেবান সরকার।
গত মাসে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের সীমান্ত শহরে সন্দেহভাজন টিটিপি’র গোপন আস্তানায় বিমান হামলা চালায়। এ হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছে আফগানিস্তান।
ভারতও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক আগ্রাসনে আপত্তি জানায়। গত ২৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিমান আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে নির্দোষ বেসামরিক লোকজনের উপর যে কোন আক্রমণের নিন্দা করি। নিজেদের ব্যর্থতার জন্য প্রতিবেশীদের দোষারোপ করা পাকিস্তানের পুরোনো অভ্যাস।’
এম পরিস্থিতিতে, আফগানিস্তানের বর্তমান নেতাদের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে প্রতিবেশী ও আফগানদের পরম শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।