‘অপারেশন সিঁদুর’ নামকরণ যে কারণে

০৭ মে ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে পাল্টা অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন, সেটির নাম রাখা হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সর্বপ্রথম ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআই এই তথ্য প্রকাশ করে।
ইরানকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে চীন
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ রাখার পেছনে রয়েছে সাংস্কৃতিক ও আবেগঘন প্রতীকী তাৎপর্য। হিন্দু বিবাহিত নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর বা লাল গুঁড়া ব্যবহার করেন। এটি তাদের বৈবাহিক জীবনের প্রতীক। পেহেলগামে সেই নৃশংস হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যাদের অনেকেই ছিলেন স্বামী ও পিতা। মৃত্যুর সময় তাদের চোখের সামনে স্ত্রীরা ও সন্তানেরা দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এ কারণেই এই অভিযানের নাম ‘সিঁদুর’ রাখা হয়েছে—যেন এর মাধ্যমে প্রতিটি শহীদের স্ত্রীর নিঃশব্দ আর্তনাদকে শ্রদ্ধা জানানো যায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী যে চিত্রটি প্রকাশ করেছে, তাতে বড় অক্ষরে লেখা ‘OPERATION SINDOOR’। এর মধ্যে ‘O’ অক্ষরটি আঁকা হয়েছে সিঁদুরের পাত্রের মতো করে, যার কিছুটা গড়িয়ে পড়েছে। এটি যেন পেহেলগাম হামলার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে এতগুলো নারীর সিঁদুর মুছে গেছে। চিত্রটির নিচে ক্যাপশন লেখা ছিল, ‘বিচার সম্পন্ন হয়েছে। জয় হিন্দ।’
অভিযোগ আছে, পেহেলগাম হামলায় পর্যটকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, ধর্ম জিজ্ঞাসা করে হত্যা করা হয় প্রকাশ্যে, পরিবারের সামনেই।
একটি ভাইরাল ছবিতে দেখা যায়—নববিবাহিতা হিমাংশী নারওয়াল বসে রয়েছেন তাঁর নিহত স্বামী, ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালের মরদেহের পাশে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মঞ্জুনাথ রাওয়ের স্ত্রী পল্লবী, যিনি আগের দিন শিকারা ভ্রমণের সময় হাসিমুখে ভিডিও করেছিলেন, পরদিন চিৎকার করে সাহায্য চাইছেন। কারণ তাঁর স্বামীকেও গুলি করা হয়েছিল।
শৈলেশ কালাথিয়ার স্ত্রী শীতল, বিতান অধিকারীর স্ত্রী সাহিনী, শুভম দ্বিবেদীর স্ত্রী ঐশান্য, সন্তোষ জাগদালের স্ত্রী প্রগতি—প্রতিটি স্ত্রীর কান্না যেন গোটা দেশকে কাঁদিয়েছে।
এই অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতদের পরিবার। ঐশান্য বলেছেন, ‘আমার স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ওনার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম, তিনি সেই বিশ্বাস রাখলেন। এটাই আমার স্বামীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা। যেখানে তিনি (স্বামী) আছেন, সেখানে নিশ্চয় শান্তি পেয়েছেন আজ।’
পুনেতে কৌশিক গনবোটের স্ত্রী সংগীতা বলেছেন, ‘এই অপারেশনের নাম দিয়ে সরকার আমাদের মতো স্বামীহারা নারীদের সম্মান জানিয়েছে। আমি সেই দিন ভুলতে পারি না। প্রতিদিন কাঁদি। আমরা অপেক্ষা করছিলাম মোদিজি কখন জবাব দেবেন, আজ তিনি দিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে।’


