শহীদ জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন (পর্ব ১)
পিতার যুদ্ধ ৯ মাস। মায়ের যুদ্ধ ৯ বছর। মা-ছেলে-নেতা-কর্মী-কবি-লেখক-সাংবাদিক ও ছাত্র-জনতার যুদ্ধ ১৬ বছর।

১৫ মে ২০২৫, ০৭:৩৩ পিএম
মহান আল্লাহ পাক জীবিকা নির্বাহের জন্য পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষকে অনেক প্রকারের পেশার দায়িত্ব-জ্ঞান- বুদ্ধি-বিবেক-বিবেচনা-কৌশল-অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দান করেছেন এবং সেই আলোকে বিভিন্ন পেশার দায়-দায়িত্ব পালন করে মানুষ জীবিকা নির্বাহ ও মানব কল্যাণে বিভিন্ন ভাবে অবদান রাখছেন। বিভিন্ন পেশার মধ্যে অন্যতম মর্যাদাশীল ও মানসম্পন্ন এবং মঙ্গলময় কাজে অবদান রাখার পেশা হচ্ছে সাংবাদিকতা।

অবশেষে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম
মহান এ পেশা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং সাংবাদিকদেরকে ঝুঁকির মাঝে থেকেই পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হয় এবং জীবনও হারাতে হয় ও হারাতে হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক মানুষের প্রতিদিনের কর্মের হিসাব রাখার জন্য প্রত্যেকটি মানুষের দুই কাঁধে দুইজন ফেরেশতা রেখেছেন। যারা মহান আল্লাহ পাকের হুকুমে মুহূর্তে মুহূর্তে কোন না কোন ভাবে মানুষের কাজেও আসছেন। আমরা মানুষ-ফেরেশতাদের সে দায়িত্ব পালন করা দুই চোখে দেখি বা না দেখি এবং বিশ্বাস করি বা না করি কিন্ত মহান দুই ফেরেশতা আমাদেরকে অনেক দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়ে থাকেন এবং কাজের হিসাব লিখে রাখেন তাঁর দানের অলৌকিক ক্ষমতার দায়িত্ব দেওয়া বলে।
আমি বিশ্বাস করি, সংবাদ জগতের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার লক্ষ্যে যাদেরকে সম্পাদক ও প্রকাশক, লেখক- কবি,সাহিত্যিক-গবেষক ও সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্বদান করেছেন। মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতার ন্যায় মানুষের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষকে দিয়ে লেখানোর উদ্দেশ্যে মহান পেশার দায়িত্ব দান করেছেন আর সে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা কেউ হক পথে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করি এবং কেউ অবৈধ পথে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করি ও লেখার মাঝেও মঙ্গলময় অনেক কাজে অবদান রাখি। তাই দুই চোখে দেখা দৃশ্য ও কানে শোনা বিভিন্ন কথাগুলো এবং পাওয়া সংবাদের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে সাজিয়ে-গুছিয়ে লেখা দাঁড় করাতে হয়। এরপর সে দায়িত্ব নিস্টার সাথে পালন করে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে মানুষের দৃষ্টিতে সঠিক তথ্য পৌছে দিয়ে ফেরেশতার ন্যায় অবদান সাংবাদিকদেরও রাখতে হয় এবং এ কাজগুলো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য সাধন করার বিষয় আর ভালো কোন সাধন আপনা-আপনি আসে না।
সংবাদপত্রের সংবাদও মানুষের পড়ার এবং ভালো কাজ করার খোরাক হিসাবে সচেতন মানুষ মনে করেন। সংবাদের ভিত্তিতে পৃথিবীর ভারসাম্যতা বজায় আছে এবং অনেক প্রতিনিধি মঙ্গলময় অনেক দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং কাজ করছেন। আমি বিশ্বাস করি আর যাই হোক মানুষের পড়ার খাদ্য খোরাক কখনো ভেজাল করা ঠিক নয়। তবে এ কথাও স্বীকার করছি যে,এ জগতে কেন অন্য কোন জগতেও খারাপ দায়িত্ব পালন করে কেউই স্থায়ীত্ব লাভ করতে পারেন না এবং খারাপের ফল খারাপ দিয়েই ভোগ করতে হবে। সুতরাং আমি চেষ্টা করবো ভেজালহীন তথ্য খাদ্য মানুষের মাঝে পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে পড়ার খাদ্য সঠিক খোরাকে পরিনত করতে। এবার চলে যাই সেই আলোচনার ভিতরে যেই বিষয় ক্যাপশনে উল্লেখ আছে আর যেকোন লেখা ফুটিয়ে তোলার জন্য লেখার মাঝে ও আগে-পরে অনেক ভূমিকা এসে যায় যা আপনারাও অবগত আছেন।
আপনারা জানেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো সাহেবের সুযোগ্য পিতা। যিনি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন নাই। ১৯৭১ সালে তিনি ৯ মাস যুদ্ধ করেন এবং জাতিকে মহান স্বাধীনতার পতাকা লাল-সবুজের উপহার দিয়ে ৯ মাসের দায়িত্ব শেষ করেছেন। তিনি জাতিকে ছেড়ে এবং যুদ্ধের মাঠ ছেড়ে কোথাও চলে যান নাই। তিনি দেশ ও জাতির পাশেই ছিলেন এবং তাঁর নীতি ও আদর্শের আলোকে কাজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকেও জাতির মাঝে উপহার দিয়েছেন। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী চেতনার দেশপ্রেমিকের প্রতীক। তাই সিপাহী-জনতার বিপ্লবে ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান কারামুক্ত হয়েছিলেন এবং জাতির ভোট সমর্থনে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব লাভ করেন।
তিনি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলার পর্যায় দেশকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মানুষের কথা বলার স্বাধীনতাও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । কিন্ত অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি কথা হচ্ছে তিনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের শিকার হয়ে ৩০ মে ১৯৮১ সালে শাহাদাত বরণ করেন।
দেশী ষড়যন্ত্রকারীদের ভিতরে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী ছিল পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং স্বৈরাচার এরশাদ আর বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের ভিতরে ছিল ভারতের কিছু লোভী-উগ্রপন্থী ও ধর্ম বৈষম্যবাদী নেতা নেত্রী। খুনিদের হাতে জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণ করার পর তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুল সাত্তার সাহেবকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় বসানো হয়। এরশাদ সন্তানের পিতা ছিল না। ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে তিনি একটি মিথ্যা ঘোষনা দিয়ে বলেন তার সন্তান হয়েছে এবং তিনি সন্তানের পিতা। এর কিছুদিন পর রাষ্ট্রের ক্ষমতা অবৈধ পথে দখল করে স্বৈরাচার খ্যাত হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। এরশাদ ক্ষমতা দখলের পরে দেশে শুরু হয় স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা এবং ঘুষ-দুর্নীতিসহ ইত্যাদি অপকর্ম এবং দিনদিন বৃদ্ধি পায় আর সাধারণ মানুষ শোষিত হয়। তাই একান্ত ভাবেই প্রয়োজন হল স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা কিন্তু জাতির দুঃসময়কে দিবেন সেই দুঃসাহসিক নেতৃত্ব।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া তো সেসময় দেশে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা একান্তই প্রয়োজন হয়েছিল সেই দুঃসময়। দেশ ও জাতীয় স্বার্থের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অসহায় ও এতিম দুই সন্তান জনাব তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোককে রেখে বেগম খালেদা জিয়া সংসার জীবন ত্যাগ করে দুঃসাহসিক অঙ্গীকার করেন। লক্ষ্য এরশাদের দুঃশাসন ও শোষণের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হাল শক্ত হাতেই ধরলেন এবং দেশ নামক সংসারের সকলকে নিয়ে সুখে-দুঃখে জীবন যাপন করাকে মূল্যায়ন করলেন। তিনি দলের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে দলের নেতা-কর্মীদেরকে চাঙ্গা করলেন এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে,এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ও জাতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে এরশাদের পতন ঘটাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলে ঘর থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। এরশাদ সকল বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও মাঠে নামিয়ে ছিল। এরশাদের কোন শক্তিই যখন জাতির শক্তির কাছে টিকে থাকতে পারছিল না।
সুতরাং জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের মুখে এরশাদ দিশাহারা হয়ে এক পর্যায় জাতীয় নির্বাচনের ঘোষনা দেয় । কিন্ত অবৈধ সেই নির্বাচনে কেউই অংশগ্রহণ করেন নাই। অঙ্গীকার ভুলে শেখ হাসিনা ১৯৮৬ সালের অবৈধ কালো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ফলে জাতির কাছ থেকে বেইমান উপাধিতে ভূষিত হয়েছে এবং বেগম জিয়া আপোষহীন দেশনেত্রীর উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দুঃসাহসিক নেতৃত্বের ফলে এবং ঐক্যবদ্ধ জাতির শক্তিশালী আন্দোলন ও সংগ্রামের কাছে এরশাদ হার মেনে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ ইং তারিখে ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয়। পরে বঙ্গভবনে গিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সাহেবের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন। তিনি তিন মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন।
এই ছিল আপোষহীনখ্যাত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার-এরশাদ বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে এবং পদত্যাগ করাতে ৯ বছরের যুদ্ধে ত্যাগ ও অবদানের ফসল। এজন্য অবশ্য তাকে নানামুখী জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। দেশ ও জাতির দুঃসময়ে দেশপ্রেমিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং লেখক-কবি-সাংবাদিক-সাহিত্যিক-কলামিষ্ট ও গবেষক নিজ-নিজ অবস্থান থেকে অবদান রেখেছেন এবং রাখছেন যা চলমান।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও গবেষক।