২০২৬ সালে হতে পারে জাতীয় নির্বাচন

ছবি : সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক

১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পিএম

২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে অর্থাৎ আগামী দেড় বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দেওয়া হয়েছে।


৯ মাসের জন্য বন্ধ সেন্টমার্টিন

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে। ভাষণে তিনি বলেন, ছয় সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ করা হবে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন তিনি। নতুন কমিশনের প্রথম কাজ হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জরুরি সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্য সৃষ্টি করা এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করে কোন সময়ে নির্বাচন করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ চূড়ান্ত করা।


প্রধান প্রধান সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে সবার প্রতি আহ্বান জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরির ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘যদি এর সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’

রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ১৫টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশন গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তারিখ।

নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা জানিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বলেন, কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে। এখন থেকে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত হলো ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার। তারা তাদের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কঠিন কাজ এখন আরও কঠিন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারও। গত ১৫ বছরে যাঁরা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছেন, তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ-তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন।

যাঁদের ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা, তাঁরা আছেন কি না, তা নিশ্চিত করা এবং ভুয়া ভোটারদের তালিকা থেকে বের করতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে চাই। এর জন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।’

জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন ড. ইউনূস
যেকোনো সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সরকারের গঠন করা ছয় সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন শিগগিরই পেশ করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। এই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। এর কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন হবে সেগুলো চিহ্নিত করা এবং বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করা। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তিনিই এই কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন। কমিশনের সহসভাপতি হবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কমিশন প্রয়োজন মনে করলে নতুন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। এই ছয়টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগামী মাসেই জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন কাজ শুরু করতে পারবে বলে তিনি আশা করছেন।

আওয়ামী লীগকে মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান
ড. ইউনূস বলেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগকে হটানো সম্ভব হয়েছে। তারা এখনো সর্বশক্তি দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে নস্যাৎ করতে চাচ্ছে, একের প্রতি অন্যের বিষ উগরে দিতে চাচ্ছে। তাদের এই হীন চেষ্টাকে কোনোভাবেই সফল হতে দেবেন না। তিনি বলেন, ‘ঐক্য এখনো পাথরের মতো মজবুত আছে। চার মাসের ব্যবধানে আমাদের ঐক্য কোথাও শিথিল হয়নি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংকল্পে আমরা অটুট আছি।’

অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরাজিত শক্তি পরাজয় মেনে নিতে পারছে না। তারা প্রতিদিন দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নানা ভঙ্গিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের আয়ত্তে রয়েছে। তাদের সুবিধাভোগীরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির ৪০০ পাতার প্রতিবেদনে দেশের মানুষ হতভম্ব বলে মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, ‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক টাকাই লুটপাট হয়েছে। দেশে এমন ধরনের পোষ্যতোষী পুঁজিবাদ তৈরি করা হয়েছিল, যার সুবিধাভোগী ছিল স্বৈরাচার ও তার সহযোগীরা। তারা প্রকাশ্যে আপনাদের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করে বিদেশে ভোগবিলাসে ব্যয় করেছে।’ তিনি বলেন, পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করছে; অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আংশিক টাকা হলেও যেন ফেরত আনা যায়।

পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ হলেই দ্রব্যমূল্য কমবে
শিগগিরই মূল্যস্ফীতি কমার আশা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালে আনতে সরকারের চেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এখনো পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। এটা সম্ভব হলে আমরা আশা করি জিনিসপত্রের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আপনাদের কষ্ট কমিয়ে আনতে সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

রমজান মাসে বাজারে পণ্য সরবরাহের সংকট হবে না বলে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে বিকল্প কৃষি বাজার চালু করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

পতিত স্বৈরশাসকের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে
জুলাই হত্যাযজ্ঞ ও হত্যা, গুমের সঙ্গে জড়িত পতিত স্বৈরশাসক ও তার দোসরদের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সব ধরনের সুযোগ তাঁরা পাবেন। বিচারপ্রক্রিয়া সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও অন্যান্য পর্যবেক্ষকের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বিচারের যেকোনো অংশ চাইলে যে কেউ রেকর্ড করার সুযোগ পাবেন।