ভোটারের বয়স কমাতে আগ্রহী নয় কোনো দল

ছবি : সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম

ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিমত জানালেও এতে আগ্রহী নয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। বিএনপির শঙ্কা, এতে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। জামায়াতে ইসলামীও একই ধারণা পোষণ করে। জাতীয় নাগরিক কমিটি এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানায়নি।


পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ

সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছিলেন, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর নির্ধারণের চিন্তা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। নাগরিক কমিটি প্রস্তাব করেছে, ভোটার হওয়ার যোগ্যরাই প্রার্থী হতে পারবেন।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীর সংখ্যা ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০। ১৭ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা আলাদা করে নেই প্রতিবেদনে। তবে গড় হিসাবে ১৭ বছর বয়সীর সংখ্যা ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩০।

গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৩৭। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। পাঁচ বছরে ভোটার বৃদ্ধি পায় ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫৬ জন। বছরে ভোটার বৃদ্ধি পায় ৩১ লাখের বেশি।

বিবিএস ও নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোটারের বয়স ১৭ নির্ধারণ করলে ৩০ লাখের বেশি মানুষ ভোটার হওয়ার যোগ্য হবে। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষদিকে নির্বাচন হলে দুই বছরে আরও ৬০ লাখের বেশি তরুণ যোগ হবেন ভোটার তালিকায়। বয়স কমিয়ে ১৭ করা হলে প্রায় এক কোটি নতুন ভোটার যোগ হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে।

অন্যান্য দেশে কী নজির
জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সীরা শিশু। তাই যেসব দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, এর অধিকাংশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮। কিছু দেশে তা ২০ থেকে ২৫ বছর। তবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় তা ১৬। আর্জেন্টিনায় ১৫ বছর বয়সীরাও প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দিতে পারে, যদি নির্বাচনের সময় ১৬ বছরে উত্তীর্ণ হয়।

যুক্তরাজ্যের চার দেশ– ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসে ভোটের বয়স ১৮। তবে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রাদেশিক ও স্থানীয় নির্বাচনে ১৬ বছর বয়সীরা ভোট দিতে পারে। জার্মানিতে প্রাদেশিক ও স্থানীয় নির্বাচনেও একই বয়সীরা ভোট দিতে পারে।

গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর কোরিয়া, নেপাল, সুদান, পূর্ব তিমুরে ভোটের বয়স ১৭ বছর। বসনিয়া ও সার্বিয়ায় কর্মজীবী হলে ১৬ বছর বয়সীরাও ভোট দিতে পারে। কিউবা, ইকুয়েডর, মাল্টায় ভোটের বয়স ১৬।

কে কী বলছেন
শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীর বড় অংশ ছিল কিশোর-তরুণ। বয়স কমানোর সুবিধায় তারা ভোটার হলে অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে, সেটি সুবিধা পেতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি ছাত্র নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠনটির সূত্র জানিয়েছে, আজ রোববার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানানো হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার অভিমতকে সমর্থনের চিন্তা রয়েছে সংগঠনটির।

গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত। নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত‍্যে পৌঁছার জন‍্য আমি তা মেনে নেব।’

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমীন টুলি বলেন, ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা বা অন্য কারও কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব এলে কথা হতে পারে।

ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর অভিমত নির্বাচন প্রলম্বিত করার জন্য কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এ করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, আরও সময়ক্ষেপণ হবে, আরও বিলম্ব হবে। মানুষের মধ্যে ধারণা হচ্ছে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।’

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘জনমনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন তাহলে কী করতে হবে? নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। আমি মনে করি, এ বিষয়কে এভাবে না বলে, এ নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে তার পরে এ বিষয় আনতে পারলে ভালো হতো; কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। এখন তো আরও বেশি করে মানুষ আশাহত হয়ে যাবে।’ ভোটের বয়সের বিষয় নির্বাচন কমিশনের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সরকারের প্রধান নির্বাহী; তিনি বলে দিচ্ছেন, ১৭ বছর হলে ভালো। যদি এক বছর কমাতে চান, তাহলে সেটা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করুক। প্রধান উপদেষ্টা যখন বলে দেন, তখন চাপ তৈরি হয় নির্বাচন কমিশনের জন্য।

জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, ভোটের বয়স কমানোর চিন্তায় অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এতে চলমান অস্থিরতা বাড়াবে। তবে এ নিয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানায়নি। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অভিমত দিয়েছেন মাত্র। তিনি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাব দেবেন, তখন জামায়াত প্রতিক্রিয়া জানাবে।

ভোট
নির্বাচন