কোরবানির পশু আমদানির প্রয়োজন নেই : ফরিদা আখতার

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ মে ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম

এবার কোরবানির জন্য দেশে উৎপাদিত এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭ টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, কোরবানি দেয়ার পরও এবার ২০ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকবে। রোববার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন উপদেষ্টা। এ সময় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


জনরোষের শিকার হয়েছে পুলিশ : প্রধান উপদেষ্টা

উপদেষ্টা বলেন, পবিত্র ঈদ-উল-আযহা সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য পবাদিপশু কোরবানি। কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সারা দেশে পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং কোরবানির পশুর অবাধ পরিবহণ নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। এছাড়া নীরোগ ও স্বাস্থ্যবান পশুর ক্রয়-বিক্রয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু কোরবানি করা প্রয়োজন।


তিনি বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা নিরুপণ করেছে। এ বছরে কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্টকৃত গবাদিপশুর মধ্যে ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫ টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০ টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২ টি অন্যান্য প্রজাতিসহ সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭ টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এবছর প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫ টি গবাদিপশুর উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছি।

কোরবানি উপলক্ষে সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরে ফরিদা আখতার বলেন, সকলের জন্য নিরাপদ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগে প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা প্রদান, প্রাণীর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের চাহিদাপূরণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

আগামী কোরবানি ঈদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রস্তুতি নিচ্ছি, যাতে আমাদের গবাদিপশুর বাজার স্থিতিশীল থাকে। পশু যাতে আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তা নিয়ে খামারিদের সাথে কথা হয়েছে। খামারিদের আশ্বস্ত করেছি, তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছে-এ বছর গবাদিপশু আমদানি করার প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশীয় উৎপাদিত যে গবাদিপশু খামারিরা করেন, তা যথেষ্ট। প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে।

আগামী কোরবানির ঈদে বাজার যাতে কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমরা আগামী কোরবানির ঈদ আনন্দের সাথে উদ্‌যাপন করতে পারবো; সেই প্রত্যাশা করছি।

চাঁদাবাজির কারণে পশুর দাম যেন না বাড়ে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছি, যেকোন সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে মনে করছি।

সারা দেশে স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন বিষয়ে ৮৩ হাজার ৬৫৬ জন খামারিকে প্রশিক্ষণ, ৬ হাজার ৬০০টি উঠান বৈঠক, ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩৭৮টি লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়েছে।

স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খামারিদের প্রশিক্ষণ চলমান আছে এবং জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে ৫৩ হাজার ২৬৩টি খামার পরিদর্শন করে খামারিদের স্টেরয়েড/ হরমোন এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ছিনতাইরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে পশু পরিবহণ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশ), জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের যৌথ সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হট লাইন-১৬৩৫৮) চালু থাকবে। যেকোন সমস্যা সমাধানে ফোন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কিছু যাতে না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে একযোগে কাজ করবে। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়াসহ যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি না করা হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।