নারীর অদৃশ্য শ্রমের মূল্য ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা

ছবি : সংগৃহীত
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
বাংলাদেশে নারীরা যে অদৃশ্য শ্রম প্রতিদিন করে যাচ্ছেন, তার আর্থিক মূল্য ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে ৬.৭ ট্রিলিয়ন বা ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১৮.৯ শতাংশের সমান এই অবদানের ৮৫ শতাংশই এসেছে নারীদের কাছ থেকে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অডিটরিয়ামে প্রকাশিত হাউসহোল্ড প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টে (এইচপিএসএ) এ তথ্য জানানো হয়।
৫ আগস্ট নিয়ে সতর্ক অবস্থানে সরকার
রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো, শিশু ও বৃদ্ধের যত্ন নেওয়া কিংবা অসুস্থের সেবা—এমন অসংখ্য কাজের ওপরই ভর করে চলে পরিবার ও সমাজ। তবু এতদিন এই কাজগুলো দেশের অর্থনীতির খাতায় লেখা থাকেনি। নতুন এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নারীর এই অদৃশ্য শ্রমের অর্থনৈতিক গুরুত্ব জাতীয় পরিসংখ্যানে ধরা হলো।
প্রধান অতিথি নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস. মুর্শিদ বলেন, নারীর শ্রম দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতির ছায়ায় ছিল। আজকের এই প্রতিবেদন সেই অমূল্য অবদানকে দৃশ্যমান করল। বিশেষ অতিথি ছিলেন মমতাজ আহমেদ এনডিসি, সিনিয়র সচিব, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং আলেয়া আক্তার, সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্যব্যবস্থাপনা বিভাগ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিংহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিবিএসের উপপরিচালক আসমা আখতার। তিনি জানান, সময় ব্যবহার জরিপ ২০২১ এবং শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই হিসাব তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠানে ইউএন উইমেনের নুবাইরা জেহেন ‘কেয়ার ক্যালকুলেটর’ নামের সরঞ্জাম ব্যবহার করে দেখান, একজন মানুষ প্রতিদিন কতটা সময় অদৈত কাজে ব্যয় করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অদৈত কাজকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—যতœ খাতকে জাতীয় বাজেট ও উন্নয়ন কৌশলে অগ্রাধিকার দেওয়া, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে নীতি প্রণয়ন, বেসরকারি খাতে পরিবারবান্ধব নীতি গ্রহণ ও যতœকেন্দ্রিক চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি। পাশাপাশি পুরুষ ও ছেলেদেরকে যত্ন ভাগাভাগিতে উৎসাহিত করা এবং নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান পরিসংখ্যানবিদ মাহিন্থান জোসেফ মারিয়াসিংহাম ভিডিও বার্তায় এই উদ্যোগকে বাংলাদেশের জন্য একটি ‘অগ্রণী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীর অদেখা শ্রমের এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, বরং নীতি ও বাজেটে লিঙ্গ-সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য এক বড় ভিত্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীর অমূল্য অবদানকে দৃশ্যমান করার মাধ্যমে দেশ এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করল।


