‘মার্চ ফর গাজা’র ঘোষণাপত্র নিয়ে উদ্বেগ

নিউজ ডেস্ক

১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৯ এএম

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে পাঠ করা ঘোষণাপত্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। শনিবার (১২ এপ্রিল) সংগঠনের সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সদস্য সচিব হাসান আরিফ বলেন, ১৯৪৮ সালে অবৈধভাবে গঠিত রাষ্ট্র ইসরায়েলকে বাংলাদেশ কিংবা ফিলিস্তিনের জনগণ কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে ‘মার্চ ফর গাজা’র নামে কর্মসূচি করে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে ইসরায়েলের ১৯৪৯ সালের সীমান্তকে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ নেই।


‘আওয়ামী লীগের বারোটা বাজিয়ে গেছে শেখ হাসিনা’

বিবৃতিতে বলা হয়, ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পাঁচ দফা দাবির মধ্যে তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে- ‘১৯৬৭ সালের আগে ফিলিস্তিনিদের যে ভূমি ছিল, তা তাদের ফেরত দিতে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে হবে।’ এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের ১৯৪৯ সালের সীমান্তকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মার্চ ফর গাজা সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হলো ঘোষণাপত্র সংশোধন করে অবৈধ ইসরায়েলের বিলুপ্তির দাবি জানানো।


বিবৃতিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে বলা হয়, আল্লামা ইকবাল ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বেলফোর ঘোষণা ও ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। বেলফোর ডিক্লারেশনের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে ইহুদি সেটলার আমদানি থেকে শুরু করে ১৯৪৮ সালের ১৪মে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন। এমনকি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশও সেই অবস্থান বজায় রেখেছে। 

এতে বলা হয়, ১৯৮০’র দশকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় আট হাজারের বেশি বাংলাদেশি ফিলিস্তিনে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন এবং অনেকেই শহীদ হন। ফলে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মেনে না নেওয়ার বিষয়টি রক্ত দিয়ে লিখিত। কিন্তু ভারত ও ইসরায়েলের দালাল ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনার সময়ে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান তথা ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তের ভিত্তিতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি মতলবি প্রচারণা শুরু হয়েছিল। 

এই প্রচারণাকে শনিবারের মার্চ ফর গাজা ঘোষণাপত্রেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। তাদের দাবি, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল কোনো নির্দিষ্ট সীমান্ত ঘোষণা না করেই সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে অবৈধ ইহুদিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে পাঁচটি আরব দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ১৯৪৯ সালের একাধিক যুদ্ধবিরতি ও ‘আর্মিস্টিস লাইন’-এর মাধ্যমে গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম বাদে বাকি পুরো ফিলিস্তিন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমও দখল করে নেয় এবং গোটা জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে।

ফলে ঘোষণাপত্রে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তের কথা বলার অর্থ দাঁড়ায়-পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম বাদে গোটা ফিলিস্তিনকে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে পরোক্ষ স্বীকৃতি দেওয়া।

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ বিবৃতিতে বাংলাদেশের সরকার, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানায়-ইসরায়েলকে বুঝে বা না বুঝে বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ন্যারেটিভ বা প্রচারণার ফাঁদে যেন কেউ না পড়েন।