আরাকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব জামায়াতে ইসলামীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৮ পিএম

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে জামায়াত নেতাদের। রোববার রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাউথ এশিয়া রিজিয়নের ডিরেক্টর জেনারেল পেং জিউবিনের নেতৃত্বে তিন সদস্য।


রচিত হচ্ছে নতুন বাংলাদেশের চার্টার : ড. ইউনূস

ওই বৈঠকে চীনকে এ দেশে আরও বিনিয়োগ বাড়ানো, তিস্তা ব্যারাজ এবং দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করার আহবানসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও দিয়েছে জামায়াত।


একই দিনে মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। এ সময় আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো এবং ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসাতে ইইউর সহযোগিতা কামনা করেন জামায়াত নেতারা।

চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক

ঢাকা সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পেং জিউবিনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।

বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সাউথ এশিয়া রিজিয়নের ডিরেক্টর জেনারেল গত তিনদিন ধরে বাংলাদেশ সফর করছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের বেশ খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে চীন সরকারের দাওয়াতে আমাদের একটি ডেলিগেশন গিয়েছিলাম। ওটা কিছুটা সরকারি সফর ছিল। ফাকার মিটিং পার্টি টু পার্টি। ‘চায়না ইজ এমাজিং ফোর্স ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ’ আমাদের রিজিয়নে। এখানকার ইকোনমি, পলিটিক্স, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপে চায়নার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যেহেতু ইনক্লুসিভ, ইসলামিক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং আমাদের প্রিন্সিপল এবং পলিসি হচ্ছে জামায়াত সবার সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক রাখতে চায় সরকারি ও বেসরকারি লেভেলে। সে হিসেবে আনন্দের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধির সঙ্গে আমরা মিট করি, অনেক খোলামেলা আলোচনা করেছি।

ডা. তাহের বলেন, চীন এখন আমাদের প্রধান ইনভেস্টর এবং এটাকে আরো অনেক পরিসরে বৃদ্ধি করার অনুরোধ করেছি। আমরা তিস্তা ব্যারাজের ব্যাপারে স্পেসিফিকলি বলেছি এবং সেকেন্ড পদ্মা ব্রিজ করার কথা বলেছি। ডিপ সিতে যে পোর্ট হচ্ছে, তাতে ইনভেস্ট করার কথা বলেছি। এর মাধ্যমে যে ব্লু ইকোনমি, তা আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। এই রিজিয়নে যাতে কেউ কারো প্রতি রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে, সেজন্য ব্যালান্স অব সিকিউরিটিজ ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় করেছি এবং বাংলাদেশ থেকে ব্যাপাকভাবে ছাত্রদের স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য আমরা বলেছি।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। বলেছি ফুড, ক্লথিং এবং শেল্টারÑ এটা কোনো সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া। আমরা রোহিঙ্গাদের মেজরিটি এরিয়ায় একটি স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছি। চীন এখানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তারা সবাই মিলে এটির একটি সমাধান করতে পারে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, নির্বাচনের সময়ের বিষয়ে আমরা বলেছি যে, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তো একটি লাইন দিয়েছেন- ডিসেম্বরে হতে পারে, বেশি সংস্কার চাইলে জুনে হতে পারে। আমরা বলেছি, ওই প্রোপজালের সঙ্গে আমরা একমত।

নির্বাচনের বিষয়ে তাদের স্পেসিফিক কোনোকিছু নেই। তারা বলেছে, আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। বাংলাদেশের বিষয়েও আমরা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করি না।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার রোববার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ ও আমিরে জামায়াতের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাওয়াতে আমিরে জামায়াতসহ আমরা ব্রাসেলস সফর করেছি। সেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বেলজিয়াম সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়। সেখানে বাংলাদেশ ও ইইউর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, দুপক্ষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন ও কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নারী অধিকার ও সংখ্যালঘুদের বিষয়ে জামায়াতের পলিসি এবং পোশাক রপ্তানি খাত নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট হন। ওই সফরের ফলোআপ আলোচনা হয় রোববার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে।

ডা. তাহের আরো বলেন, আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও তাদের পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথা বলেছি। প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসাতে আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। সেই সঙ্গে সংস্কার প্রস্তাব, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং একই ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিষয়টিও আমরা তাদের অবহিত করেছি। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার বিষয়ে তাদের বলেছি যে, যৌনকর্মীর লাইসেন্স প্রদান নারীর মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি চরম আঘাত। তারা এসব বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তারা জামায়াতে ইসলামীতে শতকরা ৪৩ ভাগ নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।