ভারতেও চাপের মুখে নিষিদ্ধ সংগঠন আ’লীগ
শেখ হাসিনার নির্দেশ নেতাদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে

প্রতীকী ছবি
১৭ মে ২০২৫, ০২:২১ পিএম
ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের কপালে ভাঁজ। সম্প্রতি ভারত সরকার অবৈধ নাগরিকদের বসবাস ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অবৈধ সবাইকে ভারত ছাড়তে বলেছে দেশটির আইনশৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফলে দেশটিতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর বড় মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে অবৈধ বসবাসকারী বাংলাদেশিদের আটক করে ‘পুশব্যাক’ করছে ভারত। এ পুশব্যাকে আ’লীগের নেতাকর্মীরা এখনো না পড়লেও স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাদের ওপর এ খড়গ নেমে আসবে বলে জানা গেছে।

ঢাকা সেনানিবাসে এলেন খালেদা জিয়া
জানা গেছে, নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আরও দুই-তিন মাস সময় দিতে চায়। আগামী আগস্টে ভারত সরকার গ্রেপ্তার অভিযান আরও বাড়াবে।
দেশটির সরকার বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদেরও ভারত ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অরুণাচল, মেঘালয়সহ ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগের লক্ষাধিক নেতা আশ্রয় নিয়েছেন। ৯ মাসেরও বেশি সময় নিরাপদে বসবাস করলেও অবৈধ নাগরিকের বসবাস ঠেকাতে ভারত সরকারের অবস্থান আ’লীগের নেতাদের ভেতরে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে গত ১০ মে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আ’লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ অবস্থায় দলটির পালিয়ে যাওয়া নেতা-কর্মীদের দেশে ফেরা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশ্রয় নেওয়া অবৈধ সবাইকে ভারত ছাড়তে বলেছে। বাংলাদেশে ফেরার নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন।
ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, দেশে ফেরার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। জীবনের ঝুঁকি কাটেনি। ফলে ভারত ছাড়া তাদের জন্য বেশ বিপদের। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ জন বড় নেতা ভারত ছেড়ে আমেরিকা-ইউরোপে চলে গেছেন। বাকিরাও চেষ্টা করছেন পশ্চিমা কোনো দেশে পাড়ি জমানোর। তবে দেশে ফেরার সাহস দেখাতে পারছেন না কোনো নেতা।
ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সাত নেতা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ভারত ছাড়ার চাপ দলটির নেতাদের ভেতরে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। নেতাদের ভেতরে নিরাপত্তাহীনতাও দেখা দিয়েছে। পলাতক নেতাদের ভাষ্য, দেশে ফেরার পরিস্থিতি এখনো হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতাদের দেশে ফেরায় মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা একেক নেতা একেক রাজ্যে বসবাস করছি। চলতি মাস থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ভারত ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের গণমাধ্যমেও অবৈধ নাগরিক প্রতিরোধে বিভিন্ন খবর ছাপা হচ্ছে। এটি ভারতে থাকা সবার ভেতরে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।’
৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নানা উপায়ে প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক নেতা পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ভারত সরকার সে সময়ে ঢোকার সুযোগও দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও ভারতে আশ্রয় পেয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি), মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সহযোগী সংগঠন ও জেলা-উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার নেতা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও ভারতে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে ভারত ছাড়ার চাপ সবার ভেতরে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে।
অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারত ছাড়ার চাপের বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা সভাপতি শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছেন। তিনিও ভারত ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতে আশ্রয়ে থাকা সব নেতাকে। শেখ হাসিনার এ নির্দেশ নেতাদের দুশ্চিন্তা ও চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যকে বলেন, সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় অনুপ্রবেশ আইন আরও কঠোর করা হয়েছে। দেশটির সংসদ ভারতের নাগরিক নয় এমন কাউকে ভারতে থাকতে না দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। ফলে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নাগরিক নয়, এমন সবাইকে দেশটি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। না হলে অবৈধ নাগরিক হিসেবে আটক করে দেশে পাঠানোর ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। আরও দুই মাস হয়তো ভারতে থাকা যেতে পারে, এর বেশি নয়।
তিনি বলেন, এরপর ভারত সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে আটক করে জেলে পুরবে। তাহলে করুণ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে।
ভারতের পুশব্যাককে ভালো চোখে দেখছেন না সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘পুশব্যাক পদ্ধতি অনুসরণ করে করা ভালো। ধাক্কাধাক্কি করে বের করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। কোনো দলের নেতাকে পাঠাতে দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষই বেশি।’ প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিয়ম মেনে পাঠানো উচিত বলে মনে করেন সাবেক এ কূটনীতিক। (সূত্র : দেশ রূপান্তর)