সত্য প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিশোধ নেয়নি জামায়াত

নিউজ ডেস্ক

২৭ মে ২০২৫, ০৩:১১ পিএম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা প্রতিশোধ নিইনি। আমরা চেয়েছি ন্যায়বিচার। এই রায়ের (আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়) মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আগের রায়গুলো ছিল ইচ্ছাকৃত নেতৃত্বের গণহত্যা। তিনি বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘ ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে। সেই সত্যটাই আজ দেখা গেছে।


হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।


ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাকে যে রাতে ফাঁসি দেওয়া হলো, সেই রাতেই তার বাসায় হামলা করা হয়েছে, পরিবারকে নাজেহাল করা হয়েছে। জেলে পাঠানো হয়েছে। ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছে সব।

তিনি বলেন, আজ যার রায় হলো, তার একটা মেয়ে ছাড়া দেশে আর কেউ নেই। ছেলেটাও দেশে থাকতে পারেনি। একবার হিম্মত নিয়ে দেশে এসেছিল, ভয়ংকর চাপের মধ্যে রাখা হয়। পরে আমরাই বলে দেশের বাইরে পাঠিয়েছি।

জামায়াত আমির বলেন, স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা পুরো বিশ্বে নিন্দিত তিরস্কৃত হয়েছে। পুরো বিচার প্রক্রিয়ার সময় দুটো টর্চার সেল গড়ে তোলা হয়েছিল। একটা সেফ হোম, আরেকটা সেফ হাউজ। সেফ হোমে নিয়ে নেতাদের নাজেহাল করা হতো। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নাজেহাল, অত্যাচার করা হতো। সেখানে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানা হয়নি। আমরা সহ্য করেছি। যথাসম্ভব প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি, চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে কেঁদেছি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সেফ হোমের নির্যাতনের পাশাপাশি মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সেফ হাউজে রাখা হতো। যাত্রাবাড়ীতে একটা জায়গায় ছিল সেফ হাউজ। এসব মিডিয়ায় উঠে এসেছিল। সারা বিশ্বে মানবাধিকার সংগঠন, বিবেকবান রাষ্ট্রনায়ক, মানুষের পক্ষ থেকে বিচার প্রক্রিয়ার নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। স্বচ্ছ বিচারের জন্য প্রতিবাদ, বিবৃতি, পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছু কানে নেওয়া হয়নি। আমাদের নেতাদেরকে আমরা হারিয়েছি।

তিনি বলেন, আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে কি হয়েছে, তা সবাই দেখেছেন। সুখরঞ্জন বালিকে কীভাবে সরকারি বাহিনী অপহরণ করেছিল সবাই দেখেছেন। তাকে ভারতে পাঠিয়ে জেল খাটানো হয়। তিনি জেল খেটে দেশে ফিরে এসেছেন। আল্লামা সাঈদী শুধু জামায়াতে ইসলামীর সম্পদ ছিলেন না, তিনি শুধু বাংলাদেশ ও মানুষের সম্পদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের বিশ্বাসীদের সম্পদ। তার সঙ্গে কি আচরণ করা হয়েছে সবাই দেখেছেন। তার পক্ষে কথা বলতে চেয়েছিলেন সুখরঞ্জন বালি। তাকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কিডন্যাপ করা হয়, যা আগে কখনো ঘটেনি। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আইন-সংবিধান কোনো বিষয় না, দেশ বা বিদেশের কোনো আইনই মানা হয়নি।

জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, আপিল বিভাগে শুনানি চলা অবস্থায় বিচারপতি সরকার পক্ষের আইনজীবীকে বলেছিলেন, আপনাদের যা বক্তব্য তাতে মতিউর রহমান নিজামীকে এক মিনিটও জেলে রাখার সুযোগ নেই। আমরা আশা করেছিলাম তিনি কথা রাখবেন। কিন্তু ছক কাটা বিদেশ থেকে সাপ্লাই দেওয়া রায়ে তাকেও একই পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। যা নয় তাই স্বীকার করানোর চেষ্টাসহ নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা ছিলেন ন্যায়-সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই তারা ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিন্তু মাথানত করেননি। সত্যের ওপরে অবিচল থাকলে ফাঁসি কোনো বিষয় নয়। মৃত্যু একবারই হবে। তবে মৃত্যু হতে হবে বীরের মতো। জামায়াত নেতারা ছিলেন বীরের মতোই।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বিপদ ঘাড়ে নিয়েও চেষ্টা করেছি পুরো সময় দেশবাসীর বিপদে পাশে থাকার। এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নেওয়ার পরও আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের গর্বের শহীদ পরিবার, আহত পঙ্গু ভাই-বোনদের পাশে থাকার। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের পুরো দায়িত্ব পালন করতে পারিনি, অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে। একসময় তো আমাদেরকে করতেই দেওয়া হতো না। এখনো আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। সেজন্য আমি ক্ষমা চাই।

তিনি বলেন, আমরা মানুষ, ভুলের ঊর্ধ্বে নই। এই সংগঠনের প্রতিটি কর্মী, সহকর্মী কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত বা কষ্ট পেয়েছেন সবার কাছে আমরা ক্ষমা চাই। কোনো শর্ত নাই, বিনা শর্তে আমরা মাফ চাই। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।

জাতির অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো সমাধান হয়নি উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এবং যারা সংশ্লিষ্ট অংশীজন; দেশকে ভালোবাসেন, জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা যেন ভূমিকা পালন করতে পারি, সেজন্য তাওফিক কামনা করি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় ও দেশবাসীর সমর্থন-সহযোগিতায় যদি দেশের সেবা করার দায়িত্ব আমাদের ওপরে আসে, কথা দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ আমরা প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমরা চাই, সমাজ দুর্নীতি, অপরাধ, দুঃশাসন, বৈষম্যমুক্ত হোক, কল্যাণ ও মানবিক সমাজ হোক। সেই সমাজ পরিগঠনে সবার সাহায্য, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সমর্থন ও দোয়া কামনা করি। সবাই মিলেমিশে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে যেন অক্ষুণ্ন রাখতে পারি।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত) এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।