বন্দর বাঁচাতে বিক্ষোভ-মিছিল

‘মা-মাটি-মোহনা, বিদেশিদের দেব না’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেব না’ ইত্যাদি স্লোগানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল করে বন্দর রক্ষা ও করিডরবিরোধী আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম।

ছবি : সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক

২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম

চট্টগ্রামের লালদিয়া চর ৩৩ বছর এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল ২২ বছরের জন্য ডেনমার্কের কম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার চুক্তি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গতকাল রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মশাল মিছিল করেছে বন্দর রক্ষা ও করিডরবিরোধী আন্দোলন। একই দাবিতে আজ শনিবার চট্টগ্রামে শ্রমিক কনভেনশন ডেকেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। এছাড়া আগামীকাল রবিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।


বিভক্তি সৃষ্টির অনেক চেষ্টা হচ্ছে : ফখরুল

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মশাল মিছিলটি বের করে বন্দর রক্ষা ও করিডরবিরোধী আন্দোলন। মিছিলটি প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জিরো পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় পুরানা পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়। এর আগে বিকেল থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়।


ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি ডা. এম এ সাঈদের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. শাহীন রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা. এস এম ফজলুর রহমান ও কার্যকরী সভাপতি আনোয়ার হোসেন রেজা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াৎ প্রমুখ।

সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এখতিয়ারবহির্ভূত ও বেআইনিভাবে চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

হাইকোর্টের নির্দেশনাও তারা মানছে না। ২০০৬ সালে নোবেল পাওয়ার পর ড. ইউনূস দেশে ফিরেই চট্টগ্রাম বন্দর উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। দীর্ঘ ১৯ বছর পর এসে তিনি বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করছেন। জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাঁবেদারি করতেই বন্দর ইজারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার চুক্তি থেকে সরে না এলে হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করে দাবি আদায় করা হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ডা. এম এ সাঈদ বলেন, ‘দেশের সব জাতীয় ও কৌশলগত সম্পদের মালিক দেশের জনগণ। দেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখে চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই। সরকার যে অজুহাতে বন্দর ইজারা দিতে চায় সেটি যুক্তিযুক্ত নয়। দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্দর পরিচালনা করতে হবে। ভবিষ্যতে জাতীয় সম্পদ রক্ষায় আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের কাছে ইজারা দেওয়ার চুক্তিকে ‘দেশবিরোধী ও অস্বচ্ছ’ দাবি করে আগামীকাল রবিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালনের আহবান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এছাড়া স্কপ আজ শনিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে শ্রমিক-কর্মচারীদের কনভেনশনের ডাক দিয়েছে। কনভেনশন থেকে হরতাল-অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এসব কর্মসূচি সফল করার পাশাপাশি বন্দর রক্ষার দাবিতে ৪ ডিসেম্বর ‘যমুনা যাত্রা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য দেশপ্রেমিক জনতার প্রতি আহবান জানিয়েছে সিপিবি, বাসদসহ কয়েকটি বামপন্থী দল।