যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি দেওয়া ইসলামবিরোধী

প্রতীকী ছবি
২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম
সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে যৌনকর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। দেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ইসলামের অনুসারী। ইসলামে বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক মাত্রই ব্যভিচার। মহান আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিঃসন্দেহে এটা অশ্লীলতা এবং নিকৃষ্ট পথ।’ (সুরা বনী ইসরাইল : ৩২)

কল্যাণকর সাংবাদিকতায় মিলবে সওয়াব
ইসলাম কোনো কাজ বা শ্রমকেই ছোট চোখে দেখেনি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিজ হাতে কর্ম করে যা খাওয়া হয়, এর চেয়ে উত্তম কোনো খাদ্য কখনোই কেউ খায় না।’ (বোখারি : ২০৭২) কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে পতিতাবৃত্তি কোনো শ্রম নয়, বরং ব্যভিচার এবং নিকৃষ্ট পথ। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন- কুকুরের মূল্য থেকে, পতিতার উপার্জন থেকে এবং গণকের বখশিশ থেকে।’ (বোখারি : ২২৩৭)
আজকের যুগে এইডসের মতো মরণব্যাধি ছড়াচ্ছে এই পতিতাবৃত্তি বা ব্যভিচারের মাধ্যমে। নবী (সা.) সেই সাড়ে ১৪শ বছর আগেই জানিয়ে গেছেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়ালে তাদের ভেতর প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয় এবং এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা তাদের আগে গত হওয়া পূর্বসূরিদের মধ্যে কখনোই দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ : ৪০১৯)
ইসলামে জীবনব্যবস্থায় একজন নারীর যাবতীয় ব্যয়ভার তার স্বামীর ওপরে। বৈবাহিক সম্পর্কের জোরে একটি যুগলের মধ্যে যেই ভালোবাসা ও দয়ামায়ার সম্পর্ক তৈরি হয়, তাতে একজন পুরুষ সারাজীবন ধরে একজন নারীকে নিজের কাছে আগলে রাখেন। বৃদ্ধ বয়সে ভালোবাসা কিছুটা মলিন হলেও বহু বছরের সম্পর্কের জোরে তৈরি হওয়া দয়া-মমতার খাতিরে বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে কোনোভাবেই ছাড়তে পারে না। আর এই নিখাদ বন্ধনের ব্যাপারেই আল্লাহর ঘোষণা- ‘আর তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে প্রস্তুত করে দিয়েছেন প্রেমপ্রীতি ও দয়ামায়া।’ (সুরা রুম : ২১) বিপরীতে ব্যভিচার সাময়িক উত্তেজনামাত্র। তাই তো সংসারহীন বয়স্ক পতিতারা জীবন কাটায় একা এবং অবহেলায়।
পতিতাদের বড় একটা অংশ পতিতাবৃত্তিতে নিজের ইচ্ছায় জড়ায় না। বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের অনেকের বয়সই ১৮ হয়নি। এদের বড় অংশকে জোর করে এ কাজে যুক্ত করা হয়েছে। আদালতে ঘোষণা দিয়ে যৌনকর্মী হতে হবে- এমন আইন থাকলেও, তা মানা হয় না। একদিকে ঘোষণা দিয়ে এ কাজে যোগ দেওয়ার সংখ্যা খুবই কম। অন্যদিকে দালালরা শিশু-কিশোরীদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দেখায় আদালতে। শ্রমিক পরিচয় ছাড়াই পতিতারা যেখানে নিগৃহীত, সেখানে ‘শ্রমিক’ লাইসেন্স পাওয়ার পর তাদের ওপর অত্যাচার কী পরিমাণ বাড়বে, তা নারীবিষয়ক কমিশন কি একটিবারও ভেবে দেখেছে? যুগে যুগেই নারীদের জোর করে পতিতাবৃত্তি করানো একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহলকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
নবীজির জমানার ঘটনা- একজন লোক তার দুজন ক্রীতদাসীকে দিয়ে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি করালে তারা নবীজির কাছে অভিযোগ করেন। আল্লাহ তখন আয়াত অবতীর্ণ করলেন, ‘আর তোমাদের ক্রীতদাসীরা পবিত্রতা রক্ষা করতে চাইলে দুনিয়ার জীবনের ধন-সম্পদের তালাশে তাদের ব্যভিচারে বাধ্য করো না। আর যারা তাদের বাধ্য করবে, নিশ্চয়ই তাদের বাধ্য করার পর আল্লাহ তো অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা নুর : ৩৩; মুসলিম : ৩০২৯)
পতিতার জন্যও সুযোগ রয়েছে জীবনকে নতুন করে শুধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। এক হাদিসে উল্লেখ আছে, একজন পতিতা নারী কুকুরকে সামান্য পানি পান করিয়েই আল্লাহর ক্ষমা পেয়েছিল। (বোখারি : ৩৩২১)
নারীবিষয়ক কমিশন সত্যিই তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হলে তাদের পুনর্বাসনের দাবি তুলত। পুনর্বাসন হতে পারত তাদের বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কিংবা কোনো সম্মানজনক পেশায় প্রবেশ করানোর মাধ্যমে। চাইলে অনেক কিছুই করা যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘স্বামীহীনা ও নিঃস্ব ব্যক্তির উদ্দেশে ছুটন্ত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সতো।’ (বোখারি : ৬০০৭)
আলোচনা শেষ করছি একটি মজার তথ্য দিয়ে, পৃথিবীর প্রায় ৩০০টি দেশের মধ্যে মাত্র ১০টির মতো দেশে যৌনকর্মীরা শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃত। সেখানেও এর কারণে ঘটছে নানা অঘটন। জার্মানির কথা উল্লেখযোগ্য। এমনকি আমেরিকার মতো দেশের ক্ষুদ্র কিছু অংশ ছাড়া তাদের দেশে পতিতাবৃত্তিই বৈধ নয়, তাদের শ্রমিক স্বীকৃতি দেওয়া তো দূরে থাক।