নারীর জন্য জান্নাতে যাওয়া সহজ

প্রতীকী ছবি

ইসলাম ডেস্ক

১৫ জুন ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম

ইসলাম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ের মর্যাদা রক্ষা করা হয়েছে অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ও মর্যাদামণ্ডিতভাবে। যুগে যুগে নানা অপপ্রচার নারীর বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি করেছে। অথচ বাস্তবতা হলো, ইসলাম নারীকে দিয়েছে এমন সম্মান, এমন মর্যাদা, এমন সহজ জান্নাতের পথ, যা পৃথিবীর আর কোনো মতবাদ দিতে পারেনি।


এবার হজের খুতবা দিবেন যিনি

আধুনিক জগতে নারীকে বলা হয় স্বাধীনতার প্রতীক। অথচ তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয় গ্ল্যামারের ভার, বাজারের পণ্য করে তোলে তাদের দেহকে। অথচ ইসলাম নারীকে দেয় সুরক্ষা, মর্যাদা এবং সহজে জান্নাত লাভের সুযোগ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষায় বলা যায়, নারীর জন্য জান্নাত একদম হাতের নাগালে, যদি সে কিছু সহজ দায়িত্ব পালন করে।


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, ধৈর্যশীল নারী, নম্রচিত্ত নারী, রোজাদার নারী, আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সুরা আহজাব, আয়াত ৩৫)। এই আয়াতটি যেন এক মহিমান্বিত গদ্যকবিতা, যেখানে একে একে গুণাবলি উচ্চারণ করে জান্নাতের পথ নারীর জন্য এমনভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, যেন সে প্রতিদিনকার সাধারণ জীবনের মধ্যেই নিজের জান্নাতের ভিত্তি নির্মাণ করতে পারে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের সতীত্বের হেফাজত করে এবং স্বামীর অনুগত থাকে, সে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে, যেটি সে চায়। (মুসনাদে আহমাদ, ১৬৬১) 

এই চারটি কাজ নামাজ, রোজা, সতীত্ব এবং স্বামীর সন্তুষ্টি—যদি একজন নারী পালন করে, তা হলে তার জন্য জান্নাতের সব দরজা খুলে যায়! এ যেন জান্নাত নারীকে ডাকছে ভালোবাসার কণ্ঠে- এসো, আমি তোমার জন্য প্রস্তুত!

১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ: নামাজ হলো ঈমানের মূল ভিত্তি। একজন গৃহবধূর জীবনে এর গুরুত্ব অনেক। রান্নাঘরের হাঁড়ি-পাতিলের শব্দের মাঝেও যদি নামাজের সময় হলে সে অজু করে দাঁড়িয়ে যায়, তবে সে জান্নাতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

২. রমজানের রোজা: রমজান মাসে যে নারী নিজের দৈহিক কষ্ট সত্ত্বেও রোজা রাখে, ঘরের কাজ সামলায়, সন্তানদের খেয়াল রাখে, সে যেন নিজ হাতে নিজের জান্নাত সাজিয়ে নেয়। তার প্রতিটি ক্ষুধা, প্রতিটি ক্লান্তি আল্লাহর দরবারে সওয়াব হিসাবে জমা হয়।

৩. সতীত্ব রক্ষা: বর্তমান সময়ে যখন চারদিকে নৈতিক বিপর্যয়, তখন একজন নারীর লজ্জাস্থানের হেফাজত এক বিশাল নেক আমল। তার সতীত্ব শুধু তার ব্যক্তিগত নয়, বরং তা সমাজের নৈতিক ভিত্তি দৃঢ় করে।

৪. স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন: অনেকেই মনে করেন, এটি ছোট একটি বিষয়। অথচ রাসুল (সা.) বলেন, যদি কোনো নারী এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি)

একজন মা যখন সন্তানদের ভালোবাসা দিয়ে লালন করেন, কষ্ট করে রাত জাগেন, ইবাদতের শিক্ষা দেন, তখন তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি মিশে যায়। হয়তো সে বড় মসজিদে যেতে পারে না, হজে যেতে পারে না, কিন্তু তার দুধে-ভেজা আঁচলের নিচেই লুকিয়ে থাকে জান্নাতের রোশনাই।

জান্নাত নারীর জন্য সহজ। কারণ ইসলাম তার দায়িত্বগুলোকে সহজ রেখেছে, তার মর্যাদা স্বীকৃত করেছে এবং তার অবদানকে ছোট করে দেখেনি। নারী যদি আন্তরিকভাবে আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পালন করে, তা হলে জান্নাত তার জন্য কোনো দূরের স্বপ্ন নয়, বরং প্রতিদিনের কাজে, আন্তরিকতায়, সততায় সে জান্নাতের পথে এক একটি পদক্ষেপ ফেলছে।

আসুন, আমরা আমাদের সমাজে নারীদের বুঝিয়ে দেই, ইসলামে তুমি সম্মানিত, সুরক্ষিত। আর সবচেয়ে বড় কথা, জান্নাত তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।