আফগানদের কাছে সিরিজ হার বাংলাদেশের

ছবি : সংগৃহীত

ক্রীড়া প্রতিবেদক

১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৪ পিএম

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ২৮.৩ ওভারে ১০৯/১০ (মোস্তাফিজ ৫*; তানজিদ ০, শান্ত ৭, সাইফ ২২, মিরাজ ৪, হদয় ২৪, নুরুল ১৫, তানজিম ০, জাকের ১৮, তানভীর ০, রিশাদ ৫)


তিন ক্রিকেটার নিহতের ঘটনায় রশিদ–নবিদের ক্ষোভ

ফল: আফগানিস্তান ৮১ রানে জয়ী


ম্যাচসেরা: ইব্রাহিম জাদরান

আফগানিস্তান ৪৪.৫ ওভারে ১৯০ (বশির ০*; গুরবাজ ১১, অটল ৮, হাশমত ৪, ওমরজাই ০, নবী ২২, খারোটে ১৩, রশিদ ১, ইব্রাহিম ৯৫, গজনফর ২২, রহমত ৯ রি.)

বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল আফগানিস্তান। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজরা দ্বিতীয় ম্যাচেও ভাগ্য বদলাতে পারেনি। ১৯১ রানের মামুলি লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৮.৩ ওভারে ১০৯ রানেই অলআউট হয়েছে। শেষ উইকেটে রশিদের বলে স্টাম্পড হন রিশাদ। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই আফগানদের কাছে সিরিজ খুঁইয়েছে টাইগাররা। আফগানিস্তান জিতেছে ৮১ রানে।  

চিরচেনা ব্যাটিং ধসই পরাজয়ের কারণ। উল্লেখযোগ্য স্কোর বলতে সাইফের ২২, তাওহীদের ২৪, জাকের আলীর ১৮ ও নুরুল হাসানের ১৫ রান। 

বল হাতে জয়ের নায়ক রশিদ খান। ১৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। শুরুতে অবশ্য ধসের নায়ক ওমরজাই। ২৭ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি।

রশিদের চতুর্থ শিকার তানভীর

রশিদের ঘূর্ণিতে খেই হারানো বাংলাদেশ ১০০ রানে হারিয়েছে নবম উইকেট। এবারও হন্তারক রশিদ খান। তার চতুর্থ শিকারে পরিণত হয়ে শূন্য রানে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরেছেন তানভীর ইসলাম। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি।  

জাকের আলীর আউটে পড়লো অষ্টম উইকেট

রশিদের ওভারে জোড়া উইকেটের পর টেকেননি জাকের আলীও। খারোটের ওভারের শেষ বলে ক্যাচ তুলে ১৮ রানে ফিরেছেন তিনি। বাংলাদেশ ৯৯ রানে অষ্টম উইকেটও হারিয়েছে। 

রশিদের জোড়া শিকারে ৭ উইকেট নেই বাংলাদেশের

পঞ্চম উইকেট পতনের পর জুটি গড়ে ইনিংস সামলাচ্ছিলেন নুরুল হাসান সোহান ও জাকের আলী। ২০ রান যোগ করে স্কোরটাকে একশ রানের কাছেও নেন তারা। ২৩তম ওভারে এসেই সব কিছু এলোমেলো করে দেন রশিদ খান। টানা দুই বলে নুরুল ও তানজিম হাসান সাকিবকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ৭ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন। শুরুতে নুরুলকে ১৫ রানে বোল্ড করেছেন। পরের বলে তানজিম সাকিবকে (০) এলবিডাব্লিউতে ফিরিয়েছেন তিনি। তাতে ৯৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।  

হৃদয়কে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন রশিদ

৫০ রানে ৪ উইকেট পতনের পর জুটি গড়ে খেলছিলেন তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলী। ২৯ রান যোগ করেন তারা। ১৬.২ ওভারে রশিদকে মেরে খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হয়েছেন তাওহীদ হৃদয়। তাতে ৩৪ বলে ৪ চারে ২৪ রানে ফিরেছেন তিনি। বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারায় ৭৯ রানে।  

ওমরজাইর তৃতীয় শিকার মিরাজ

আবারও ইনিংসের শুরুতে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু হয়েছে। ৫০ রানের মধ্যেই ফিরেছেন ৪জন। ১০.২ ওভারে ওমরজাইর তৃতীয় শিকার হয়েছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে এলবিডাব্লিউতে ফিরিয়েছেন আফগান অলরাউন্ডার। মিরাজ রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি। তার ৭ বলের ইনিংসে ছিল ৪ রান।  

ছক্কা মারার পরের বলেই আউট সাইফ

অন্যপ্রান্ত নড়বড়ে হয়ে পড়লেও ভরসা দিচ্ছিলেন সাইফ হাসান। রানের গতি বাড়াতে বড় শটস খেলছিলেন তিনি। সেই বড় শট খেলতে গিয়েই ৬.৫ ওভারে ওমরজাইর শিকার হয়েছেন। আউট হওয়ার আগের দুই বলে যথাক্রমে চার, ছক্কা মেরেছিলেন সাইফ। পঞ্চম বলটিও শর্ট লেংথে দিয়েছিলেন ওমরজাই। সাইফ প্রলুব্ধ হয়ে আপার কাট করতে গিয়ে ডিপ থার্ডে বশিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ২২ রানে। সাইফের ২৩ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ১টি ছয়। 

রানআউটে শান্তর বিদায়

তানজিদের বিদায়ের পর রানের গতি বাড়াচ্ছিলেন সাইফ হাসান। নতুন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তও সঙ্গ দিচ্ছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি পারেননি। ৪.৫ ওভারে দ্রুত দ্বিতীয় রান নেওয়ার তাড়ায় রানআউটের শিকার হন শান্ত। ফিরেছেন ৭ রানে। তাতে ২৫ রানে পড়েছে দ্বিতীয় উইকেট। 

প্রথম ওভারেই সাজঘরে তানজিদ

১৯১ রানের জবাবে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। আজমতউল্লাহ ওমরজাইর বলে পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে শূন রাতে ক্যাচ আউট হন তানজিদ হাসান। তাতে ১ রানে পড়েছে প্রথম উইকেট। 

১৯০ রানে শেষ আফগানিস্তানের ইনিংস

শেষ দিকে স্কোর বাড়িয়ে নিতে ভূমিকা ছিল এএম গজনফরের। ১৮ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করেন তিনি। তাকে ৪৪.৪ ওভারে ক্যাচ আউটে ফিরিয়েছেন রিশাদ হোসেন। তাতে ১৯০ রানে ৯ উইকেট হারায় আফগান দল। চোট পাওয়া রহমত শাহ অবশ্য শেষ ব্যাটার হিসেবে তার পর মাঠে নামলেও এক বল খেলেই আবার হুইল চেয়ার করে মাঠ ছাড়েন তিনি। তাতে ১৯০ রানে শেষ হয় আফগানিস্তানের ইনিংস।  

টস জিতে আফগানিস্তান ব্যাট করতে নামলেও স্লো পিচে তাদের ১৯০ রানে থামিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু মাত্র ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানই দলটিকে টেনে নিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৯৫ রানে কাটা পড়েন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসটি আসে গজনফরের ২২। তাতেই স্কোরটা ১৯০ পর্যন্ত গেছে। বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪২ রানে নেন ৩ উইকেট। দুটি করে নেন রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান সাকিবও।

৬৫ রানে রহমত শাহ ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর ৭৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় আফগানরা। তার পর ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ নবী ও ইব্রাহিম জাদরান। সর্বোচ্চ ৩৯ রান যোগ করেন তারা। নবীর আউটে এই জুটি ভাঙার পর খারোটেকে নিয়ে আরও ৩৬ রান যোগ করেন ইব্রাহিম। জুটিগুলো বড় না হওয়াতেই দিশা হারায় দলটির ইনিংস। ১৫৭ রানে রশিদের বিদায়ে সপ্তম উইকেট পড়লে দ্রুত অলআউটের শঙ্কা জাগলেও অষ্টম উইকেটে বড় স্কোরের আশা জাগাচ্ছিলেন ইব্রাহিম ও গজনফর। কিন্তু মিরাজ ইব্রাহিমকে ৯৫ রানে থামালে বেশি দূর যেতে পারেনি তারা। 

ইব্রাহিমকে ৯৫ রানে থামালেন মিরাজ

১৫৭ রানে সাত উইকেট হারানোর পর দ্রুত অলআউট হওয়ার শঙ্কায় ছিল আফগানিস্তান। দলকে প্রায় দুইশর কাছে নিয়ে যায় গজনফর ও ইব্রাহিম জাদরান জুটি। ৩১ রান যোগ করেন তারা। সেঞ্চুরির কাছে থাকা ইব্রাহিমকে ৯৫ রানে আউট করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরু থেকে প্রান্ত আগলে খেলতে থাকা এই ওপেনার ১৪০ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান। 

মিরাজের আঘাতে ফিরলেন রশিদ খানও

খারোটেকে রান আউটে ফিরিয়ে একই ওভারের শেষ বলে নতুন ব্যাটার রশিদ খানকেও আউট করেছেন মিরাজ। তাকে ১ রানে ক্যাচ আউট করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এক ওভারে দুই উইকেটের পতনে ১৫৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান। 

রান আউটে ফিরলেন খারোটে, ভাঙলো জুটি

নবীর আউটের পর খারোটেকে নিয়ে নতুন জুটি গড়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। ৩৬ রান যোগ করেন তারা। ৩৭.১ ওভারে খারোটেকে সরাসরি থ্রোতে রান আউট করেছেন তানজিদ হাসান। তাতে ১৫৩ রানে পড়েছে আফগানিস্তানের ষষ্ঠ উইকেট। খারোটে ২৪ বলে ১৩ রান করেছেন। 

নবীকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন তানজিম

দ্রুত ২ উইকেট পতনের পর পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়েন মোহাম্মদ নবী ও ইব্রাহিম জাদরান। ৩৯ রান যোগ করেন তারা। তাদের ব্যাটেই স্কোর একশ ছাড়ায়। ২৯.১ ওভারে সেই জুটি ভেঙেছেন তানজিম হাসান। নবীকে মিরাজের ক্যাচ বানান তিনি। ৩০ বলে ১ ছক্কায় আফগান ব্যাটার বিদায় নেন ২২ রানে। 

ইব্রাহিমের ফিফটি

সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে প্রান্ত আগলে খেলছেন ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি। তিনি ফিফটির দেখা পান ৭০ বলে।  

মিরাজের পর রিশাদের আঘাত, ৪ উইকেট নেই আফগানিস্তানের

মিরাজের পর রিশাদের আঘাতে দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছে আফগানিস্তান। আগের ওভারে মিরাজের আঘাতে বোল্ড হন হাশমত। পরের ওভারে রিশাদ এসে বিদায় দেন গত ম্যাচের সেরা পারফর্মার আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে (০)। রিশাদের বলে ব্যাটের কানায় লেগে তার ক্যাচ জমা পড়ে স্লিপে থাকা তানজিদ হাসানের হাতে। তাতে ৭৯ রানে দলটি হারায় চতুর্থ উইকেট।  

আফগান অধিনায়ককে বোল্ড করলেন মিরাজ

রহমত শাহ চোট পাওয়ায় তার বদলে নেমেছিলেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদী। কিন্তু তাকে টিকতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৭.৫ ওভারে তাকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন তিনি। শহীদী আউট হন ৪ রানে। তাতে ৭৮ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। 

ইনজুরিতে মাঠ ছাড়লেন রহমত শাহ

৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে খেলতে থাকেন রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জাদরান। ১২তম ওভারে তাদের ব্যাটেই স্কোর ছাড়ায় ৫০। ১৪.২ ওভারে এসে পায়ের সমস্যায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়েন রহমত শাহ। তিনি তখন ৯ রানে ব্যাট করছিলেন। তার জায়গায় নামেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদী।  

তানভীরের আঘাতে পড়লো দ্বিতীয় উইকেট

আক্রমণে এসেই নবম ওভারে উইকেট তুলে নিয়েছেন বামহাতি তানভীর ইসলাম। তার ঘূর্ণি বলে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন সেদিকুল্লাহ অটল। এগিয়ে এসে মেরে খেলতে গেলে ৮ রানে তানজিম সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তার ১৩ বলের ইনিংসে ছিল ১টি চার। 

টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর আফগানদের হয়ে ভালো ব্যাট করছিলেন ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। স্কোরবোর্ড সচল রাখছিলেন তিনি। পঞ্চম ওভারে তানজিম সাকিবের বলে চড়াও হয়ে বাউন্ডারিও মারেন। ওভারের পঞ্চম বলেই তাকে শর্ট বলের ফাঁদে ফেলেন তানজিম। গুরবাজ বড় শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে জাকের আলীর কাছে ক্যাচ দিয়েছেন। তাতে ১১ বলে ১১ রানে বিদায় নেন গুরবাজ। তার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছয়।  

টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। এদিন অবশ্য টস ভাগ্য সহায় হয়নি। আবু ধাবিতে শুরুতে টস জিতে আফগানিস্তান ব্যাটিং নিয়েছে। 

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে আফগানিস্তান। ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২২১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ২২২ রানের লক্ষ্য ৫ উইকেট হারিয়ে তাড়া করে আফগান দল। 

একাদশে কারা

আজকের একাদশে বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন এনেছে। বাদ পড়েছেন তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। তাদের জায়গায় এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেন। আফগানিস্তান অবশ্য একই দল নিয়ে খেলেছে। 

বাংলাদেশ একাদশ: তানজিদ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ হাসান, তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), নুরুল হাসান, জাকের আলী, তানজিম হাসান, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।

আফগানিস্তান একাদশ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, সেদিকুল্লাহ অটল, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহীদী (অধিনায়ক), আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান (অধিনায়ক), নানগেলিয়া খারোটে, এএম গজনফর ও বশির আহমেদ।