অদৃশ্য এক শহর ‘ডার্ক ওয়েব’

প্রতীকী ছবি
১৬ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৩০ পিএম
আমরা প্রতিদিন যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, সেটি আসলে এক বিশাল সমুদ্রের ওপরের স্তর। গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব বা অনলাইন শপিং সাইট এসবই শুধু দৃশ্যমান অংশ। এর নিচে আছে আরো গভীর স্তর। যাকে বলা হয় ডিপ ওয়েব। আর সেই ডিপ ওয়েবের অন্ধকার কোণেই লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এক জগৎ ডার্ক ওয়েব। এটি হলো এমন এক জায়গা।

বাংলাদেশে চলে এলো স্টারলিংক
যেটি সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি ব্যবহারের জন্য আলাদা ব্রাউজার দরকার। সবচেয়ে পরিচিত হলো টর (TOR)। এখানে থাকা ওয়েবসাইটগুলো চলে অদ্ভুত সব ডোমেইনে, যেমন : onion। ব্যবহারকারীর পরিচয় এখানে গোপন থাকে। তাই অনেকেই এটিকে বেছে নেন। কিন্তু গোপনীয়তার এই সুবিধাটিই হয়ে উঠেছে অপরাধীদের স্বর্গ।
বিশ্বজুড়ে ডার্ক ওয়েবের কুখ্যাতি মাদক, অস্ত্র, ভুয়া পাসপোর্ট, হ্যাক করা ব্যাংক তথ্য, এমনকি শিশু নির্যাতনমূলক কনটেন্টের বাজার হিসেবে। এখানেই সক্রিয় থাকে ভাড়াটে হ্যাকার ও সাইবার অপরাধীরা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। অনলাইনে প্রতিনিয়ত শোনা যায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি কিংবা সিম রেজিস্ট্রেশনের ডেটা ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, সাধারণ মানুষও হয়ে উঠতে পারে সাইবার অপরাধীদের টার্গেট।
তবে ডার্ক ওয়েব মানেই শুধু অপরাধ নয়। সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মীরা সেন্সরশিপ এড়িয়ে এখানে নিরাপদ যোগাযোগ করেন। গবেষকরা চালান পরীক্ষামূলক কাজও। কিন্তু এই বৈধ ব্যবহার খুব সামান্য। বাস্তবে ডার্ক ওয়েবের বেশির ভাগ জায়গাই অন্ধকার অপরাধের আস্তানা। ফলে কৌতূহলবশত যে কেউ এখানে প্রবেশ করলে হ্যাকিং, ম্যালওয়্যার বা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে বড় সতর্কতা হলো অপরিচিত লিংকে ক্লিক না করা। টর ব্রাউজার ডাউনলোড না করা এবং কখনোই ব্যক্তিগত তথ্য অচেনা প্ল্যাটফর্মে না দেওয়া। কারণ একবার যদি কোনো তথ্য ডার্ক ওয়েবে চলে যায়, সেটি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। আর অবৈধ কিছু কিনতে বা লেনদেন করতে গিয়ে আইনগত জটিলতায় পড়াও সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ডার্ক ওয়েবকে বলা যায় অদৃশ্য এক শহর। যেখানে আলো নেই, নিরাপত্তা নেই, আছে শুধু অন্ধকার ফাঁদ। বাংলাদেশ আস্তে আস্তে স্মার্ট দেশের পথে এগোচ্ছে। তাই আমাদের ডিজিটাল জীবনে শুধু স্মার্ট ব্যবহারই নয়; বরং সচেতন ব্যবহারও জরুরি। ডার্ক ওয়েব যতই রহস্যময় মনে হোক, এর থেকে দূরে থাকাই অনলাইনে নিরাপদ থাকার সবচেয়ে বড় উপায়।