ফেক অ্যাপ শনাক্ত করবেন যেভাবে

ছবি : সংগৃহীত
১৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
আজকের স্মার্টফোননির্ভর জীবনে অ্যাপ আমাদের দৈনন্দিন কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। কেনাকাটা, পড়াশোনা, ব্যাংকিং ও বিনোদন—সবকিছুর জন্যই আমরা স্মার্টফোনের অ্যাপ ব্যবহার করি। সবকিছুই এখন আঙুলের এক স্পর্শে। কিন্তু এই সুবিধার ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর ফাঁদ। ফেক বা ভুয়া অ্যাপ। এগুলো দেখতে আসল অ্যাপের মতোই লাগে। কিন্তু ভেতরে ভরা থাকে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ফাঁদ। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এ ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

ক্রোম ইউজারদের জন্য দুঃসংবাদ
ধরা যাক, আপনি গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে একটি জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ সার্চ করলেন। দেখলেন নাম প্রায় একই, লোগোও আসলটার মতো, এমনকি স্ক্রিনশটও মিলছে। কিন্তু আসল ডেভেলপার কোম্পানির নামের জায়গায় আছে কোনো অপরিচিত নাম। আপনি হয়তো না ভেবেই ইনস্টল করে ফেললেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও! এমন ঘটনার উদাহরণ ইতোমধ্যেই ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি বাংলাদেশেও ঘটেছে।
প্রথমেই খেয়াল করবেন ডেভেলপার তথ্যের দিকে। আসল অ্যাপ সবসময় তাদের অফিশিয়াল প্রতিষ্ঠানের নামে প্রকাশিত হয়। যেমন : Facebook-এর ক্ষেত্রে ‘Meta Platforms, Inc.’ বা Gmail-এর ক্ষেত্রে ‘Google LLC’ বা ‘WhatsApp LLC’—এগুলো আসল ডেভেলপারের নাম। ফেক অ্যাপগুলোয় ডেভেলপারের নামে বানান ভুল, অপ্রাসঙ্গিক নাম বা অদ্ভুত আইডি থাকতে পারে।
দ্বিতীয়ত, রিভিউ ও রেটিং যাচাই করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আসল অ্যাপে সাধারণত অনেকসংখ্যক রিভিউ ও ব্যবহারকারীর ফিডব্যাক থাকে, যা দীর্ঘ সময় ধরে জমা হয়। ফেক অ্যাপগুলোয় হয় রিভিউ খুব কম, নয়তো অল্প সময়ে শত শত ৫-স্টার রিভিউ চলে আসে। যার অনেকটাই এক লাইনের বা একই ধরনের লেখা, যা বট দ্বারা তৈরি হতে পারে।
এরপর খেয়াল করুন অ্যাপের ডাউনলোড সংখ্যা। জনপ্রিয় আসল অ্যাপের ডাউনলোড সংখ্যা সাধারণত লাখ বা কোটি ছাড়িয়ে যায়। যদি কোনো জনপ্রিয় অ্যাপের ক্লোন বলে দাবি করা অ্যাপের ডাউনলোড সংখ্যা কয়েক শ বা কয়েক হাজার হয়, তবে সতর্ক হওয়া উচিত।
স্ক্রিনশট ও অ্যাপের বিবরণ (Description) বিশ্লেষণ করুন। ফেক অ্যাপের স্ক্রিনশট অনেক সময় অস্পষ্ট, বানান ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক ছবি দিয়ে তৈরি হয়। অ্যাপের বিবরণে যদি ভাষাগত ভুল, অতিরিক্ত সুবিধা দাবি বা অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি থাকে, তবে সেটি সন্দেহজনক।
সবশেষে, পারমিশন চেক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো সাধারণ গেম বা ওয়ালপেপার অ্যাপ যদি আপনার কন্টাক্টস, মাইক্রোফোন, লোকেশন বা এসএমএসের অনুমতি চায়, তবে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। অফিশিয়াল অ্যাপ সাধারণত প্রয়োজনীয় পারমিশনই চায়।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। গুগল Play Protect, অ্যাপল App Review System এসব ফিচার অ্যাপ স্ক্যান ও নিরাপত্তা যাচাই করে। তবু ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। তাই ব্যবহারকারী হিসেবে সতর্ক থাকা, অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপের লিংক নেওয়া আর অজানা ডেভেলপারের অ্যাপ এড়িয়ে চলা উচিত। এই তিনটি অভ্যাস আপনাকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে পারে।
সাম্প্রতিক প্রতারণার ধরনে একাধিক সাইবার সিকিউরিটি রিপোর্টে দেখা গেছে, অনেক ফেক অ্যাপ AI-জেনারেটেড রিভিউ ব্যবহার করছে। যাতে অ্যাপটি দেখতে আরো বিশ্বস্ত লাগে। এমনকি কিছু অ্যাপ শুরুতে নির্দোষভাবে কাজ করে। পরে আপডেটের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার যুক্ত করে দেয়। গেম, VPN, ফটো এডিটর, ফ্রি প্রিমিয়াম সার্ভিস দেওয়া অ্যাপ, এসব ক্যাটাগরিতে ফেক অ্যাপ বেশি পাওয়া যায়।
মনে রাখবেন, অ্যাপ স্টোরে থাকা মানেই সেটি নিরাপদ নয়। আপনার সামান্য সচেতনতাই আপনাকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।