আইনের ফাঁকে বেপরোয়া ‘নগদ’

ছবি : সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম
নগদ লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) খাতের এই প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রস্তুত, তবে পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম অ্যাক্ট, ২০২৪ কার্যকর হওয়ার অপেক্ষা করছে। আইনটি দ্রুত কার্যকরের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অন্তবর্তী সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সয়াবিনের দাম বাড়ল লিটারে ১৪ টাকা
২০১৯ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা হিসেবে বাজারে যাত্রা শুরু করে নগদ। তবে এখনো এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অস্থায়ী লাইসেন্সের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘নগদ’ পরিচালনায় ও লেনদেনে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদের কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয়।
জানা গেছে, গত জুলাইয়ে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম অ্যাক্ট, ২০২৪’ আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। তবে আইনটি প্রকাশিত হলেও তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি। কেননা, আইনের ধারা ১-এর ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হইবে। তবে সরকার এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ শিগগিরই সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করে তারিখ নির্ধারণ করবে। এ তারিখ নির্ধারণ না করার কারণে প্রশাসক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভাষ্য—পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০০৮ ও বাংলাদেশ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস রেগুলেশন, ২০২২-এর আওতায় ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। তবে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আইনটি আরো সুনির্দিষ্ট বলে মনে করছেন তারা। গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ‘নগদ’র এক পরিচালক। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনার বাইরে ‘নগদ’র সব কার্যক্রমের ওপর দুই সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসক নগদে অনেক অনিয়ম পেয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রকৃত মানি ও ই-মানির মধ্যে ৬০০ কোটি টাকার ঘাটতি। ই-মানি তৈরির মাধ্যমে এই টাকা এসেছে, যা নগদে প্রকৃতপক্ষে ছিল না। সংশ্লিষ্টদের মতে, আর্থিক খাতে এটি বড় ধরনের জালিয়াতি। অন্য এক উদাহরণ-সরকারি ভাতার জন্য নির্ধারিত ৪১টি ডিস্ট্রিবিউশন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কয়েক বছরে মোট প্রায় এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা অননুমোদিত উত্তোলন হয়েছে। প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিষয়টি ডাক বিভাগের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে। অনিয়মে জড়িত নগদ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন প্রশাসক। প্রশাসক নিয়োগের পর থেকে নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর এ মিশুকসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অফিসে আসছেন না।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিয়মিত অডিটের পাশাপাশি নগদের পূর্ববর্তী কার্যক্রমের ফরেনসিক অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ উদ্দেশ্যে একটি নিরীক্ষক দল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির আর্থিক রেকর্ড বিশ্লেষণ করা হয়, যা পরবর্তীতে আইনগত কার্যক্রমে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। গত মাসে এই অডিট পরিচালনার জন্য বিদেশি নিরীক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদমাধ্যমে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে।