ইসলামি শিল্পীগোষ্ঠী কলরবকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ
‘কলরব আজ লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে’

ছবি : সংগৃহীত
৩১ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম
জনপ্রিয় ইসলামি শিল্পীগোষ্ঠী ‘কলরব’ এখন শুধু সংগীত পরিবেশক দল নয়, বরং এক ভয়ঙ্কর দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু—এমনটাই অভিযোগ তুলেছে দলটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলে তাঁর বড়ভাই মো. শামসুল আলম বলেন, ‘কলরব আজ লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।’

কনসার্টের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল ফ্রি
সংবাদ সম্মেলনে শামসুল আলম বলেন, ‘কলরব তার ভাইয়ের হৃদয়ের সংগঠন ছিল, যেটি তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন নিষ্ঠা ও শ্রম দিয়ে। কিন্তু আজ সেই সংগঠনটির অফিস বয় বদরুজ্জামান উজ্জ্বল ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে পড়ে লুটপাটের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর মোবাইল ফোনে কলার টিউন ও রিং ব্যাক টিউন হিসেবে কলরবের গজল ব্যবহারে বিপুল অর্থ আয় শুরু হয়। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কাছে সে আয়ের কোনো হিসাব কখনোই আসেনি। বরং কৌশলে সংগঠনের সমস্ত আয় এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন বদরুজ্জামান। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে আসা স্পন্সর, অনুদান, কনটেন্ট আয়ের সমস্ত কিছুই জমা হয় এখন তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ‘‘হলিটিউন’’-এর নামে।’
সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী উম্মে হাবিবা বলেন, ‘তার সন্তানরা আজ এতিম। তারা কলরবের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরি হয়েও কোনো সম্মান, কোনো আর্থিক সুবিধা তো দূরে থাক, বরং সবদিক থেকেই বঞ্চিত। অথচ যারা একসময় অফিস বয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তারা এখন একের পর এক ফ্ল্যাট, গাড়ি, প্রোডাকশন হাউজের মালিক।’
সংবাদ সম্মেলনে আজাদের পরিবার দাবি করে, ‘কলরবের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক বদরুজ্জামান উজ্জ্বল এবং প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস শুধু সংগঠনের অর্থ আত্মসাৎ করেননি, বরং প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি, শ্রম ও সুনামকেও ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের পেছনে। সংগঠনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের নাম বদলে ‘‘হলি টিউন’’ করে ফেলা হয়েছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব শুধু গোপন নয়, বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অন্যান্য সদস্যদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে মাসোহারা, উপহার এবং হুমকির মাধ্যমে।’
প্রয়াত আজাদ পরিবারের ভাষ্য, কলরব প্রতিষ্ঠার সময় যারা ছিলেন তাদের অনেকেই আজ সংগঠন থেকে বিদায় নিয়েছেন। কেউ কেউ চুপ থাকেন নিরুপায় হয়ে। যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা একে একে বহিষ্কৃত হয়েছেন। অথচ সংগঠনের আয় বছরের পর বছর ধরে বেড়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানি, কর্পোরেট স্পন্সর, ইউটিউব এবং ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এসব থেকে সংগঠনের তেমন কোনো স্থায়ী সম্পদ তৈরি না হলেও বদরুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠজনরা হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক, যা তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০০৪ সালে ইসলামি শিল্পীগোষ্ঠী ‘কলরব’ প্রতিষ্ঠা করেন আইনুদ্দীন আল আজাদ। ২০১০ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করলে কলরব শিল্পীগোষ্ঠী বদরুজ্জামান উজ্জ্বল ও রশিদ আহম্মেদ ফেরদৌস পরিচালনা করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কথা ছিল শিল্পীগোষ্ঠী কলরব থেকে উপার্জিত অর্থ তার পরিবারকে প্রদান করা হবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা আয় হলেও আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবারকে কিছুই দেওয়া হয় না। উপরন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে শিল্পীগোষ্ঠীর সমস্ত সম্পদ নিজেদের নামে করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শিল্পীগোষ্ঠী কলরবের অফিস বয় বদরুজ্জামান উজ্জ্বল ইউটিউব, ব্রাইট সলিউশন মাল্টিমিডিয়া লিমিডেট ও হলি টিউনসহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্রবাসী সিটি, হেলিকপ্টারসহ গ্রুপ অব কোম্পানির শীর্ষ শেয়ারদারী মালিক। অথচ আইনুদ্দীন আল আজাদের পরিবার আজ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। স্ত্রী ও সন্তানরা আর্থিক কষ্টে ভুগছেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রয়াত আইনুদ্দীন আল আজাদের স্ত্রী উম্মে হাবিবা, শ্বশুর গোলাম নবী, ছেলে গালিব বিন আজাদ, বড় মামা সাইফুল ইসলাম ও ছোট মামা শহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।