চীনের সঙ্গে ভারতের Water War!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম

তিব্বতে চীনের নতুন মেগা বাঁধ নির্মাণ নিয়ে এবার বড় ধরনের উদ্বেগে পড়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন—এই বাঁধ চালু হলে শুষ্ক মৌসুমে এক প্রধান নদীর পানিপ্রবাহ প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর এ নিয়েই নতুন করে পানিযুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে।


ফের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের প্রকল্প নিয়ে অবগত চারটি পৃথক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


এই খবর সামনে আসতেই দিল্লি দ্রুত নিজেদের বিকল্প পরিকল্পনায় এগোতে শুরু করেছে। ভারত ইতোমধ্যেই অরুণাচল প্রদেশে বড় ধরনের বাঁধ নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কোম্পানি এনএইচপিসি।
প্রস্তাবিত আপার সিয়াং বাঁধের ধারণক্ষমতা হবে ১৪ বিলিয়ন ঘনমিটার (BCM)। এটি সম্পন্ন হলে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাঁধ হয়ে দাঁড়াবে। এর মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ বজায় রাখা এবং বর্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০০০ সালের শুরুর দিকে ভারত এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু অরুণাচল প্রদেশের স্থানীয়দের প্রবল বিরোধিতায় প্রকল্পগুলো স্থগিত হয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল—এ ধরনের বাঁধ গ্রামাঞ্চল ডুবিয়ে দেবে এবং তাদের জীবিকা বিপন্ন করবে।
কিন্তু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চীন যখন বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দেয়, তখন থেকে ভারত তার প্রতিদ্বন্দ্বীর পানিনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করে।
চীনের বাঁধ সম্পন্ন হলে তারা প্রায় ৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরাতে সক্ষম হবে। এতে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে। ভারতের সরকারি বিশ্লেষণ বলছে, এই বাঁধ কার্যকর হলে দেশে প্রবাহিত বার্ষিক পানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চীন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে।
এর প্রভাবে আসামের রাজধানী গুয়াহাটিসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো মারাত্মক পানিসংকটে পড়তে পারে।
তবে ভারতের প্রস্তাবিত বাঁধ কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। এটি ১৪ বিসিএম পানি সঞ্চয় করতে পারবে এবং আংশিক খালি রাখলে প্রায় ৩০% চীন হঠাৎ করে যদি অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়, সেটি শোষণ করাও সম্ভব হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছে—তাদের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি এবং ভাটির দেশগুলোর পানিপ্রবাহ বা পরিবেশের ক্ষতি করবে না। তারা ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পানি ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা বজায় রাখার কথাও স্মরণ করিয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। তবে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এই উদ্বেগ সরাসরি তুলেছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—চীন-ভারতের মধ্যে বাঁধকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা ভবিষ্যতে কৌশলগত টানাপোড়েন আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই সীমান্ত ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে। তাই পানিসম্পদকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতের সংঘাত এড়াতে জরুরি হয়ে পড়েছে সংলাপ ও সহযোগিতা।

india
china
চীনের সঙ্গে ভারতের Water War!