সীমান্ত দিয়ে ৭৯ ভারতীয়কে বাংলাদেশে পুশইন

সারাদেশ ডেস্ক

০৭ মে ২০২৫, ০৫:২১ পিএম

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি ও মাটিরাঙা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতের গুজরাট রাজ্যের অন্তত ৭৯ জন মুসলিম নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। মঙ্গলবার (৬ মে) রাত থেকে বুধবার (৭ মে) ভোর পর্যন্ত এ দুই উপজেলার তিনটি ভিন্ন সীমান্তপথ দিয়ে তাদের অনুপ্রবেশ করানো হয়। 


২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার আরও ১৫২১

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ভারতীয় নাগরিকদের আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানান, তারা ভারতের গুজরাট রাজ্যের বাসিন্দা। বাংলা ভাষাভাষী হলেও তাদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ভারতে।


তারা দাবি করেন, বিএসএফ সদস্যরা তাদেরকে গুজরাট থেকে বিমানযোগে ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে আসেন। এর পর মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়া ও যামিনীপাড়া এবং পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী রুপসেনপাড়া এলাকা দিয়ে তাদের পুশইন করানো হয়।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোর ৫টার দিকে মাটিরাঙ্গার ৪০ বিজিবি খেদাছড়া ব্যাটালিয়নের আওতাধীন বেলছড়ি বিওপি ও শান্তিপুর বিওপির মাঝামাঝি সীমান্ত দিয়ে ২৭ জন ভারতীয় মাটিরাঙা উপজেলার গোমতি ইউনিয়নের শান্তিপুর ও হাজীপাড়া এলাকায় প্রবেশ করেন। একই সময় ২৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের তাইন্দং বিওপির সীমান্ত দিয়ে আরও ২২ জন এবং পানছড়ি উপজেলার ৩২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের রূপসেনপাড়া বিওপির সীমান্ত দিয়ে ৩০ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়েন। 

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে এখন পর্যন্ত ৭৯ জন অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া গেলেও জেলা প্রশাসন বলছেন, ‘৬৬ জনকে পুশইন করা হয়েছে। তবে অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে নিজেদের হেফাজতে রাখলেও এ নিয়ে বুধবার বিকেল নাগাদ কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি।’ 

এ বিষয়ে ৪০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে জানা যাচ্ছে, বিএসএফ সুপরিকল্পিতভাবে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইন করছে। বলা হচ্ছে, এদের পূর্বপুরুষেরা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। এই অজুহাতে এদেরকে সীমান্তে এনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

বিজিবি কর্মকর্তারা আরও জানান, বর্তমানে খেদাছড়া, যামিনীপাড়া, তাইন্দং ও পানছড়িসহ কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের তত্ত্বাবধানে আরও প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ভারতীয় মুসলিম নাগরিক অবস্থান করছেন। যেকোনো সময় তাদেরও অনুপ্রবেশ করানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিজিবি সীমান্তে টহল জোরদার করেছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে।

বিজিবির খাগড়াছড়ি সেক্টরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় পুশব্যাকের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

খাগড়াছড়ির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত তিনটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে মোট ৬৬ জন অনুপ্রবেশের তথ্য রয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা দ্রুত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেছেন। এদের সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলেন এবং নিজেদের গুজরাটের মুসলিম বলে পরিচয় দিয়েছেন। বিজিবি বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে দেখছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিজিবির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। আমরা তাদেরকে দ্রুত পুশব্যাক করানোর চেষ্টা করছি।’