নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত

ছবি : সংগৃহীত
০১ জুন ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের যে রায় হাই কোর্ট দিয়েছিল, এক যুগ পর তা বাতিল করে দিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর গুলি
হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আপিল শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারকের বেঞ্চ রোববার এ রায় দেয়।
চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত এল। আর এর মধ্য দিয়ে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খুলল ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপির সঙ্গে সরকারে থাকা জামায়াতে ইসলামীর সামনে।
রায়ের পর এক ফেইসবুক পোস্টে শুকরিয়া জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। নির্বাচন কমিশন যেন দ্রুত নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়, সেজন্য আল্লাহর ‘সাহায্য’ চেয়েছেন তিনি।
এ মামলায় জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম।
রায়ের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিশির মনির বলেন, “দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়ের আইনি লড়াইয়ের সফল অবসান হল। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তার নিবন্ধন ফিরে পেল।”
এক নজরে জামায়াতে ইসলামী
জামায়াতে ইসলামীর সূচনা হয় উপমহাদেশের ধর্মীয় রাজনীতিক আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালের ২৬ অগাস্ট, তখন এর নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ।
১৯৭১ সালের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় জামায়াতও এর আওতায় পড়ে। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমানের আমলে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পায় জামায়াত।
সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসন পায় এবং সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দেয়। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আসন কমে তিনটি হলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত পায় ১৭ আসন। চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পান জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা।
সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল জামায়াত। সেবার তারা দুটি আসন পায়।
ওই নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে সেই আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, হত্যাকাণ্ডে সায় ও সহযোগিতা দেওয়ার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার আমির গোলাম আযমকে টানা ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। আপিল নিষ্পত্তির আগে কারাগারেই তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলটির পাঁচ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় আওয়ামী লীগের সময়ে।
এক রিট মামলার রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে হাই কোর্ট। ফলে দলটির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
এর বিরুদ্ধে আপিল করেও সে সময় নিজেদের পক্ষে রায় পায়নি জামায়াত। ক্ষমতার পালাবদলের পর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত পাল্টানোয় এখন আবার দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে ভোটের রাজনীতির করার সুযোগ তৈরি হল দলটির সামনে।