বিএনপি চায় নির্বাচনের দিন গণভোট, জামায়াত-এনসিপি চায় আগেই
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে মতানৈক্য

ছবি : সংগৃহীত
০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হলেও ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে এক জায়গায় আসতে পারেনি। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে বলে কমিশন আশা করছে। সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বুধবার (৮ অক্টোবর) কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এ রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারেনি।
১১ দফা দাবিতে কুমিল্লা টাউন হলে সমাবেশ
বিকেল ৩টায় বিরতি দিয়ে রাত সোয়া ১১টায় বৈঠক শেষ হয়। শুরু হওয়া বৈঠকে সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গণভোট কখন ও কী আদেশে হবে, সেটি নিয়ে বিভক্তি দেখা যায়। বিএনপি ভোটের দিন গণভোট চেয়েছে। জামায়াত এবং এনসিপি চায় সংবিধান বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট।
ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ। সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে।
এর পাশাপাশি কমিশন ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। গতকাল পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। এর মধ্যে গত রবিবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে গণভোট করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। কিন্তু গণভোট কবে ও কিসের ভিত্তিতে হবে, ভিন্নমতের কী হবে—এগুলো নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ছিল। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে দলগুলোর সঙ্গে মুলতবি আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
শুরুতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ দলগুলোকে গণভোটের সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে দীর্ঘ আলোচনায় দলগুলো কমবেশি আগের অবস্থানই তুলে ধরে। ফলে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হয়নি।
জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেওয়ার পক্ষে মত তুলে ধরে বিএনপি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বেশ কিছু দল সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেওয়ার পক্ষে। জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সাথে গণভোট দেওয়ার পক্ষে মত তুলে ধরে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের অল্প সময় বাবি আছে। এর আগে গণভোটের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজন করা সম্ভব নয়। এতে অতিরিক্ত অর্থও খরচ হবে। তারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করার প্রস্তাব জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়াস হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদের গাঠনিক ক্ষমতা জনগণের কাছ থেকেই আসবে এবং সেই ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যম হবে গণভোট। তার মতে, গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি সনদ অনুমোদন করে, তাহলে পরবর্তী সংসদের দায়িত্ব হবে সনদের ঘোষিত দফাগুলো বাস্তবায়ন করা।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বিশেষ সংবিধান আদেশ বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রয়োজন আছে। এই আদেশে গণভোটের কথা বলা থাকবে। তফসিলে জুলাই সনদ থাকবে। আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে। আর আগামী সংসদের দুটি ক্ষমতা থাকবে। একটি সাধারণ সংসদের ক্ষমতা, অন্যটি কনস্টুয়েন্ট পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা। সংসদের প্রথম অধিবেশনে এই ক্ষমতা থাকবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে সাধারণ সংসদ কাজ করবে। এভাবে হলে সংস্কার টেকসই হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যে কয়টি বিষয়ে ভিন্নমত আছে সেগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো না হলে সংস্কার মুখ থুবড়ে পড়বে। তিনি বলেন, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত নিলে আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গণভোট করা সম্ভব।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘সংস্কারগুলো আগামীতে প্রশ্নবিদ্ধ হবে বা বাতিল হবে এমন প্রক্রিয়ায় যাওয়া ঠিক হবে না। টেকসই করার বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ নামে একটি আদেশ দেওয়া উচিত। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে গুরুত্ব হারাবে।’


