চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, সাগরিকার হ্যাট্রিকসহ ৪ গোল

ছবি : সংগৃহীত

ক্রীড়া প্রতিবেদক

২২ জুলাই ২০২৫, ১২:২৯ পিএম

তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন মোছাম্মৎ সাগরিকা। ফেরার ম্যাচটা তিনি রাঙালেন একাই ৪ গোল করে। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশও জিতল বড় ব্যবধানে। সুবাদে প্রতিযোগিতার অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরল পিটার বাটলারের শিষ্যরা।


২০২৬ বিশ্বকাপ আমার শেষ : নেইমার

বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় সোমবার (২১ জুলাই) প্রতিযোগিতার শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছে ৪-০ গোলে। অর্থাৎ ম্যাচের সবগুলো গোলই করেছেন সাগরিকা। আর বাংলাদেশ ৬ ম্যাচের সবগুলো জিতে শেষ করল প্রতিযোগিতা।


এদিন ম্যাচের আগাগোড়াই ছিল বাংলাদেশের দাপট। অথচ ম্যাচটার আগে অনেকের মনে কত শঙ্কাই না ঘুরপাক খাচ্ছিল। কারণ আগের ৫ ম্যাচের ৪টিতে জেতা নেপালেরও ভালো সুযোগ ছিল শিরোপা নিজেদের করার। এ ম্যাচটি জিতলে বাংলাদেশের সমান পয়েন্ট হতো তাদের। তবে গোল ব্যবধানে যেহেতু এগিয়ে ছিল তারা, তাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত দলটি। এটাই অনেকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। কারণ টুর্নামেন্টে নেপাল বেশ ভালো ফুটবল খেলেছে। প্রথম দেখায় বাংলাদেশ জিতেছিল বটে, তবে ৩-২ গোলের সেই জয়টা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। দ্বিতীয় দেখায় না আবার প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে দলটি!

আগের ৫ ম্যাচের সবগুলো জেতায় বাংলাদেশের জন্য অবশ্য ম্যাচটা ড্র করলেই চলত। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাগরিকা এতটাই তেতে ছিলেন যে, নেপাল কার্যত তার কাছেই হেরে গেছে। নেপালের বিপক্ষে ম্যাচেই লাল কার্ড দেখায় তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাগরিকা। শাস্তি শেষে সেই নেপালের বিপক্ষে ফিরেই দেখালেন নিজের কারিশমা। মাত্র ৩ ম্যাচ খেলে দুই হ্যাটট্রিকে মোট ৮ গোল করে প্রতিযোগিতা শেষ করলেন তিনি। সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় যা তাকে রেখেছে দ্বিতীয় স্থানে। ১০ গোল করে তালিকার সবার ওপরে নেপালের পূণিমা রায়।

পূর্ণিমার সঙ্গে ৭ গোল করা মীনা দেউবাকে নিয়ে ভয় ছিল। তবে বাংলাদেশের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা এদিন দুজনকেই বোতলবন্দি করতে পেরেছিলেন। খুব একটা কার্যকর হতে পারেননি এই দু’জন।

প্রথম দুই ম্যাচ জেতার পর বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার জুনিয়র খেলোয়াড়দের সুযোগ দিয়েছেন বেশি। তবে এদিন সেরা একাদশটাই মাঠে নামান তিনি। তাই শুরুর একাদশে ৯টি পরিবর্তন আনতে হয় তাকে। অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার প্রান্তি, স্বপ্না রানী, মুনকি আক্তাররা ফেলেন শুরুর একাদশে। নেপালের শুরুর একাদশে ছিল তিন পরিবর্তন।

বাংলাদেশ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকে। দ্বিতীয় মিনিটেই সাগরিকার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট কোনো রকমে কর্নারের বিনিময়ে রুখেন নেপাল গোলরক্ষক। তবে অষ্টম মিনিটে সাগরিকাকে থামানো যায়নি। মধ্যমাঠ থেকে স্বপ্না রানীর বাড়ানো বল ধরে আক্রমণে ঢুকেন সাগরিকা। বক্স ছেড়ে বেরিয়ে আসা গোলরক্ষক সুজাতাকে কাটিয়ে ডান পায়ের প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।

১৮ মিনিটে নেপাল প্রায় গোল পেয়েই যাচ্ছিল। বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিলি অনেক উঁচুতে লাফিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলেন। তাতেই সুযোগটা তৈরি হয় নেপালের জন্য। কিন্তু মীনার নেওয়া শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে সুক্রিয়া হেড নিয়েছিলেন। সেটাও ছিল ভয়ংকর। তবে এ দফায় একহাতে তা থামিয়ে দারুণভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক মিলি।

২১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মুনকির নেওয়া শট প্রায় পোস্টে জড়াচ্ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে সেটা কর্নানের মাধ্যমে বাঁচান নেপাল ডিফেন্ডার আনিশা। এর আগে অবশ্য পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া নেপাল গোলরক্ষকের হাতে লেগে বলের গতি কমে যায়। না হলে হয়তো বলটি জালেই থাকত।

প্রথমার্ধে এক গোল করতে পারা বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে আদায় করে আরও তিন গোল। ৫১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সাগরিকা। উমেহ্লার বাড়িয়ে দেওয়া বল ধরে প্রথমে নেপালের একজন রক্ষণের খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সে ঢুকেন। এরপর ডান পায়ের শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল জালে পাঠান। ৫৮ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করে ফেলেন সাগরিকা। এ দফায় বক্সের মুখ থেকে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি। ৭৭ মিনিটে আদায় করেন নিজের তথা দলের চতুর্থ গোল।

একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল আরও দুই গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা পূর্ণিমাকে তিনি ধরেন ফেলেন কি না। তবে সেটা আর হয়নি। তা ছাড়া ম্যাচের শেষ কয়েক মিনিট বাকি থাকতে তাকে তুলেও নেন কোচ বাটলার। ততক্ষণে অবশ্য বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য শিরোপা উল্লাস ছিল কেবলই সময়ের অপেক্ষা। রেফারির শেষ বাঁশি বাজাতেই সেই অপেক্ষার অবসান হয়। শিরোপা ধরে রাখার আনন্দে মাতে মেয়েরা।

অনূর্ধ্ব-১৮, অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২০ ফরম্যাট মিলে ৬ বারের মধ্যে এই প্রতিযোগিতায় পাঁচবারই চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-২০ ফরম্যাটে প্রথমবার মেয়েদের সাফ আয়োজিত হয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই হিসাবে অনূর্ধ্ব-২০ ফরম্যাটে দুবারই চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। গত বছর ঢাকাতেই এই প্রতিযোগিতাটি অনূর্ধ্ব-১৯ ফরম্যাটে আয়োজিত হয়েছিল। সেখানে ভারতের সঙ্গে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাল-সবুজের মেয়েরা।