স্বপ্ন সত্যি হলো হামজা চৌধুরীর

ছবি : সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক

১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৭ পিএম

স্বাভাবিকভাবে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা একাই আসেন। গতকাল মঙ্গলবার ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখা গেছে। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতকে হারানোর পর বাংলাদেশ কোচের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আসেন হামজা চৌধুরী। এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সংবাদ সম্মেলন রুমে ঢুকতেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে সবাই দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের ফুটবলে এমন দৃশ্য অনেক বছর দেখা যায়নি। 


১৯-০ গোলে হারল বাংলাদেশ

দীর্ঘ ২২ বছর পর ভারতকে হারানোর পর হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা সব কৃতিত্ব যেমন দিলেন শিষ্যদের, তেমনি করে জয়টি নিজের স্বপ্ন পূরণ বলে জানান হামজা, ‘অবশ্যই স্বপ্ন পূরণ। আপনার একাধিক স্বপ্ন থাকতে পারে। এটি তার একটি। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি আমরা বড় কোনো টুর্নামেন্টেও কোয়ালিফাই করব। আমরা এখন প্রমাণ করেছি, আমরা সক্ষম। শুধু সময় আর ধৈর্য দরকার। আমাদের দলে অনেক কম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। গ্যালারিপূর্ণ স্টেডিয়ামে খেলা বিশাল চাপ। জায়ান-মিতুলরা চাপ সামলে দারুণ খেলেছে। মিতুল তো শেষদিকে কয়েকটি বড় সেভ করেছে। এখানে আমরা আজ ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি। পৃথিবীর আর কোথাও এটা সম্ভব নয়। তাই এটি অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্যের মধ্যে থাকবে।’


গত মার্চে শিলংয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয় হামজা চৌধুরীর। অবশ্য সেই ম্যাচে দল জিততে পারেনি। এরপর ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের বিপক্ষে ভালো খেলেও হেরেছে তারা। তাতে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে লাল-সবুজের দলকে। এশিয়ান কাপে খেলতে না পারার কষ্ট পোড়াচ্ছে হামজাকে, ‘হ্যাঁ, কষ্ট লাগে অবশ্যই। কিন্তু এটিও এক ধরনের ফাইনাল ছিল। ২২ বছর মানুষ অপেক্ষা করেছে বড় ম্যাচ জেতার জন্য। আজ সেটাই হয়েছে। আমরা সবাই জানতাম, পারফরম্যান্স তো হচ্ছেই, এবার দরকার ফল। আজ হয়তো পারফরম্যান্সটা পুরোদমে হয়নি, কিন্তু ফল এসেছে। মার্চে আবার নতুন করে তৈরি হব এবং দুটিকে একসঙ্গে মিলিয়ে আরও শক্ত দল হয়ে ফিরব, ইনশাআল্লাহ।’ 

এমন জয়ে ফুটবলারদের কঠোর পরিশ্রম ছিল বলে জানান লেস্টার সিটির এ তারকা, ‘আমি তো আসলে ক্যাম্পে একেবারে শেষে যোগ দিয়েছি। কোচ, কোচিং স্টাফ আর খেলোয়াড়রা ২৩ দিন ধরে এখানে আছে। কোচ বলেছেন, ৫০০ ঘণ্টার বেশি সবাই একসঙ্গে ছিলেন। পরিবার থেকে দূরে, হোটেলে থেকে দেশের জন্য, পরিবারের জন্য সবাই কঠোর পরিশ্রম করে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ, আজ তার ফল মিলেছে। আমি আর শমিত এসে কিছুটা মানসিকতা যোগ করার চেষ্টা করেছি। আজ আমরা সেই মানসিকতাই দেখিয়েছি। শেষ চার ম্যাচে আমরা দারুণ খেলেছি। ট্যাকটিক্যালি খুব ভালো ছিলাম, কিন্তু শেষ ধাপে হোঁচট খাচ্ছিলাম। আজ উল্টোটা হলো। হয়তো বল পায়ে ততটা ভালো ছিলাম না। কিন্তু দেখিয়েছি, আমরা কতটা স্থিতিশীল হতে পারি। এবার সময় এসেছে দুই দিকই একত্র করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।’

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে ফুটবলারদের মধ্যে অনেক আলাপ হয়েছে। এ ম্যাচে আমরাই জিতবই। সবার মধ্যে এই জেদটা কাজ করায় সাফল্য এসেছে বলে মনে করেন হামজা, ‘আপনি আপনার ভাগ্য নিজেই তৈরি করেন। শেষ চার ম্যাচ খুব কঠিন ছিল। আমরা ড্রেসিংরুমে বলেছিলাম যেন আমরা একসঙ্গে উদযাপন করতে পারি। কোচ ও দলের যে ত্যাগ– পরিবার থেকে দীর্ঘসময় দূরে থাকা, সেসবের প্রতিদান আজ পেয়েছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত, কারণ তাদের জন্যই আমরা আজ এমন উদযাপন করতে পারছি।’ 

এই জয়টি কোচ ক্যাবরেরার জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছে। নিজেকে সুখী মানুষ মনে করা এ স্প্যানিয়ার্ড জয়ের কৃতিত্ব দিলেন শিষ্যদের, ‘আমি খুব খুশি। কিন্তু সবচেয়ে খুশি খেলোয়াড়দের জন্য। আমরা আগেই বলেছিলাম এটার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এবং আজ দেখিয়ে দিল। ভারতকে হারানো এই দলের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার হওয়া উচিত। এই লেভেল আমাদের আছে। সাফের যে কোনো দলকেই আমরা হারানোর সামর্থ্য রাখি।’