ইন্টারনেটের দাম কমাতে অনিচ্ছুক আইএসপিগুলো

প্রতীকী ছবি

প্রযুক্তি ডেস্ক

২৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ পিএম

সাধারণ জনগণের জন্য ইন্টারনেট খরচ কমাতে নতুন ট্যারিফ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নতুন হার অনুযায়ী, ৫ এমবিপিএস ইন্টারনেট সেবার মাসিক মূল্য হবে ৪০০ টাকা, ১০ এমবিপিএস ৭০০ টাকা এবং ২০ এমবিপিএস ১,১০০ টাকা। বর্তমানে এসব প্যাকেজের দাম যথাক্রমে ৫০০, ৮০০ ও ১,২০০ টাকা।


ড. ইউনূসের টুইট, ইলন মাস্কের সাড়া

বিটিআরসি বলছে, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং গ্রাহক পর্যায়ে ব্যয় হ্রাস করে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারকে আরো বিস্তৃত করা। তবে এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নিয়ে সরাসরি সম্মতি দেয়নি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি)।


গত ১৫ জুন বিটিআরসির কাছে এই অনীহার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।

সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিমের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন হার বাস্তবায়ন আর্থিকভাবে কঠিন হবে এবং এতে সেবার মানও ব্যাহত হতে পারে। এ ছাড়া তারা বিটিআরসির কাছে নীতিগত ব্যাখ্যা বা ‘ক্ল্যারিফিকেশন’ চেয়েছে এই অ্যাসোসিয়েশন।

আইএসপিএবির মতে, সেবার মান বজায় রাখার পাশাপাশি খরচ মেটানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে যদি প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা, কর হ্রাস বা মূল্য ছাড় না দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে আমিনুল হাকিম বলেন, সরকার ইন্টারনেট সেবার দাম সবার নাগালে আনতে চাইলেও বাস্তব কাঠামো সেই লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করছে। আইএসপিরা একাধিক স্তরে ব্যান্ডউইথ কিনে থাকে, যেখানে সরকার ৫০-৫৫ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব নেয়। পাশের দেশগুলোর তুলনায় এই কর অনেক বেশি।

যদিও আইটিসি, এনটিটিএন ও সাবমেরিন ক্যাবল পর্যায়ে দাম কমানোর ঘোষণা এসেছে, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। অথচ সরকার ১ জুলাই থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ২০ শতাংশ মূল্য হ্রাস চায়। বর্তমান কর, ভ্যাট ও রাজস্ব শেয়ার বজায় রেখে এই দাম কমানো অসম্ভব।

তবে ভোক্তারা বলছেন, আইএসপিগুলোর আপত্তি ও বাস্তবায়ন জটিলতা নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফায়েজ আহমেদ তৈয়বের উদ্যোগে মে মাসে আইটিসি প্রতিষ্ঠান, সাবমেরিন ক্যাবল এবং এনটিটিএন পর্যায়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ভোক্তাপর্যায়ে দাম কমানোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন।

ভোক্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী যেখানে ইন্টারনেট একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের পথে থাকা একটি দেশে সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমূল্যের কারণে গ্রামাঞ্চল ও নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এখনো ইন্টারনেট অনেকাংশেই সীমিত।

এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো ঘোষণা না এলেও, সাধারণ ভোক্তাদের প্রত্যাশা-বিটিআরসি দৃঢ় অবস্থান নেবে এবং আইএসপিগুলোকে বাধ্য করবে ট্যারিফ বাস্তবায়নে। একই সঙ্গে সেবার মান বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও থাকা জরুরি।